মাইথন অফিসে কাজের চাপ অথবা ব্যস্ত-সমস্ত শহরের দূষণ কোলাহল থেকে রেহাই পেতে কয়েকটা দিন মাইথনে সময় কাটানোর মজাই আলাদা। এখানে বেড়াতে আসার সময় শুরু হয় সেপ্টেম্বর থেকে। চলে মার্চ মাস পর্যন্ত। তবে বর্ষাকালেও মাইথনের আলাদা রূপ খুলে যায়। সবুজ বনানীতে ঝমঝম বৃষ্টির ধারাপাত এক অন্য অভিজ্ঞতা এনে দেয়। বর্ষার কালো মেঘ ঢেকে দেয় পাহাড়ের চূড়া। স্ফীত হয় নদীর বুক। এই বর্ষাতেই জলাধারের জল ছাড়া হয়। জল ছাড়া দেখার জন্য প্রতিদিন এখানে কয়েক হাজার মানুষ ভিড় করেন। মনোরঞ্জনের তিনটি উপাদানই এখানে মজুত রয়েছে। পাহাড়ের উচ্চ শিখরে যারা সময় কাটাতে পছন্দ করেন তাদের জন্য উচু পাহাড়ের মাথায় বনবাংলো আছে। যারা দিনের আলোতেও গাছগাছালির থকথকে অন্ধকার ভালবাসেন অথবা আধার রাতে জোনাক আলোয় ঝিঝি পোকার ডাক শুনে রোমাঞ্চিত হতে চান তাদের জন্য গহন অরণ্যে বনবাংলোর ব্যবস্থা আছে। আবার তিরতিরে হাওয়ার দোলায় যারা বহতা নদীর পাড়ে একাকী সঙ্গোপনে মনের কথা বলতে চান, তাদের জন্য বাথানবাড়ির কুল হারানো নদীর পাড়ও আছে।
মাইথন বাথান বাড়ি
২.

মাইথন নদী
৩.

মাইথন জলাধার
৪.

মাইথন জলাধার দৃশ্য৫.

মাইথন মাইথন জলাধারটিও দেখার মতো। এর দৈর্ঘ্য সাড়ে পাচ কিলোমিটার। জলাধারের পরিধি ১৬০ বর্গমিটার। নদীর তলদেশ থেকে জলাধারের উচ্চতা ৫০০ ফুট। প্রায় ৮০০ মিটার এলাকার ওপর নির্মিত হয়েছে কংক্রিটের বাধ। ১১ টি লক গেট আছে। জল যখন নদীর বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন এই লকগেট খুলে বাধের জল ছাড়া হয়। এই বাধের পাশে বিশাল উচু এক পাহাড়ের কোলে বানানো হয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। জলাধারের ঠিক পাশেই রয়েছে হরিণ বন। ডি ভি সি কর্তৃপক্ষ এখানে হরিণ প্রজনন কেন্দ্র বানিয়েছেন। মুক্ত পরিবেশে হরিণ চরে বেড়াতে দেখা যায়। এখানে নদীগর্ভে একাধিক দ্বীপ আছে। পর্যটকদের এই দ্বীপগুলিতে বেড়ানোর সুযোগও আছে। নৌকো বা স্পিড বোটে চেপে এই সব দ্বীপে যাওয়া যায়। সারা দিন থেকে রান্না-খাওয়া করে পিকনিকের মেজাজে কাটানো যায়। মাইথনকে কেন্দ্র করে পাশের দুটি অঞ্চল সীদাবাড়ি ও বাথানবাড়িতে মানুষজন বেড়াতে যান। সীদাবাড়ি এলাকায় রয়েছে জঙ্গল এবং পর্বতমালা। ফিসফাস আওয়াজও এখানে পাহাড়ের গায়ে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে। এই জায়গা আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে মনোরম একটি পার্ক বানিয়েছেন ডি ভি সি কর্তৃপক্ষ। গোটা একটা দিন কাটানোর জন্য সীদাবাড়ি দারুণ। পর্যটকরা কেউ খাবার নিয়ে আসেন, কেউ আবার রান্না করেও খান। রান্নার সামগ্রী জোগাড় করে দেন পাশ্বর্বর্তী আদিবাসী গ্রামের বাসিন্দারা।
সীদাবাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে এগিয়ে গেলে দেখা পাওয়া যায় বাথানবাড়ির। এখানে পাহাড়ের ছিটেফোটা মেলে না। কয়েকটা উচু টিলা এবং বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে থাকা শাল-সেগুন-পলাশের বন। মন ভরিয়ে দেবে কূল হারানো নদী। ঠিক যেন সমুদ্র। চার দিকে চিকচিকে নুড়ি বিছানো মাটিতে ঝিলিক দেয় প্রকৃতির আলো। তিরতির করে বয়ে যাওয়া হাওয়ায় নদীর ঢেউ ওঠে তিন থেকে চার ফুট। মন চাইলে নদীতে স্নানও করা যায়। মাইথনের অসম্ভব সুন্দর দৃশ্যাবলির মাঝে নৌকো-বিহারের আনন্দই আলাদা! সুসজ্জিত নৌকো বানিয়ে অথবা স্পিড-বোট চালিয়ে এই পেশায় যুক্ত হয়েছেন প্রচুর মানুষ। সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক শোভায় সুসজ্জিত মাইথন নিরিবিলিতে সময় কাটানোর এক আদর্শ স্থান।
যাতায়াতকলকাতা থেকে ট্রেনে এলে আসানসোল অথবা বরাকর স্টেশনে নামতে হবে।আসানসোলে নামলে, ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে ভাড়া গাড়িতে মাইথন আসতে ৫০০ টাকা লাগবে। বরাকর স্টেশনে নামলে খরচ হবে ৩০০ টাকা।
কলকাতা থেকে বাসে এলে আসানসোল নেমে ভাড়া-গাড়ি ধরে আসতে হবে। রুটের বাস আছে তবে পর্যাপ্তর তুলনায় অনেক কম। সব সময় মেলে না।
কলকাতা থেকে সরাসরি গাড়িতে এলে দুর্গাপুর এক্সেপ্রসওয়ে ধরে ধানবাদের দিকে আসতে হবে। এই রাস্তার নাম ২ নম্বর জাতীয় সড়ক। সোজা চলে আসতে হবে ডুবুরডিহি চেকপোস্ট। এখানে এসে ডান দিকের রাস্তা ধরে মাইথন। ডুবুরডিহি চেকপোস্ট থেকে মাইথন মাত্র সাত কিলোমিটার।
থাকবার জায়গা মাইথনে একাধিক হোটেল এবং রিসর্ট আছে।মজুমদার নিবাস (ডি ভি সি কর্তৃপক্ষ)
নন্ এসি ডবল বেডের ভাড়া ১৮০ টাকা। চারটি সুসজ্জিত স্যুইট আছে ভাড়া বিভিন্ন রকমের।
ফোনে বুক করা যায়- নম্বর ০৬৫৪০-২৫২৪৬৫।
শান্তি লজ (পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তত্ত্বাবধানে)
ভাড়া: নন্ এসি ডবল বেড ৪০০ টাকার মধ্যে। এসি ডবল বেড ৭০০ টাকার মধ্যে।
ফোন নম্বর- ০৩৪১-২৫২৩৭৩৫।
পাহাড়ের ওপর একটি বনবাংলো আছে
চারটি ডবল বেড ঘর আছে। ভাড়া ১২০০ টাকার মধ্যে প্রতিটি।
ফোন নম্বর- ০৩৪৩-২৫৩৭২২৯।
বেসরকারি হোটেলে এসে বুকিং করা যায়
ডবল বেড নন্ এসি ৪০০ টাকার মধ্যে। ডবল বেড এসি ৭০০ টাকার মধ্যে।