Thursday, 19 April 2012

ডাইনটিকরি (মেদিনীপুর)

ডাইনটিকরি (মেদিনীপুর)

পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড় ব্লকের ডাইনটিকরি গ্রামে রয়েছে প্রাচীন এক বৌদ্ধ মন্দির। মাকড়া (ঝামা) পাথরে তৈরি মন্দিরটি উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে এখন ধ্বংসের মুখে। কংসাবতী লাগোয়া ডাইনটিকরিতে নদীর ধারেই রয়েছে মন্দিরটি। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, যে ভাবে পাড় ভাঙতে ভাঙতে নদী এগিয়ে আসছে, তাতে প্রাচীন যুগের এই নিদর্শনটি যে কোনও দিন নদীগর্ভে তলিয়ে যেতে পারে। বৌদ্ধ এই মন্দির বা উপাসনালয়টিকে নিয়ে স্থানীয় ও বাইরের একাধিক গবেষক ক্ষেত্র-সমীক্ষা করেছেন। মন্দির বাচাতে গ্রামবাসীরা প্রশাসনের নানা মহলে স্মারকলিপিও দিয়েছেন। কিন্তু সংস্কার-সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়নি।

১।

 

 

 

 

 

 

খ্রিস্টীয় একাদশ-দ্বাদশ শতকে মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল বলে অনুমান। মন্দির পূর্বমুখী। চৌকো, আয়তাকার ঝামা পাথর অনুপম জ্যামিতিক ধাচে স্তরে স্তরে সাজিয়ে মন্দিরটি তৈরি হয়েছে। দু’টি পাথরের মাঝে সিমেন্ট জাতীয় কিছু ব্যবহার করা হয়নি। মন্দিরের চূড়ায় ন’টি ধাপ। ভেতরের ছাদটি লহড়া পদ্ধতিতে নির্মিত। বিগ্রহহীন মন্দিরের প্রবেশপথে বর্তমানে কোনও

দরজা না থাকলেও অনেক আগে লোহার দরজা ছিল বলে ধারণা। মন্দিরের সামনে রয়েছে মাটির ঢিবি। অনুমান, সেটির ভেতর প্রত্নতািত্ত্বক নিদর্শনও থাকতে পারে। মন্দিরে যে আগে যাগযজ্ঞ হত, তার প্রমাণস্বরূপ আশেপাশে প্রাচীন পাত্রের ভাঙা অংশ ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। মন্দিরের নীচে একটি সুড়ঙ্গ কংসাবতীর তীর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। যদিও কালের গর্ভে ওই সুড়ঙ্গপথ এখন মাটিচাপা পড়ে গিয়েছে।

জনশ্রুতি, এই অঞ্চলে আগে ডাইনিরা থাকত। গ্রামের লোকজন তাদের টুকরো টুকরো করে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। সেই থেকেই নাকি গ্রামের নাম প্রথমে হয় ‘ডাইন টুকরি’ পরে ‘ডাইনটিকরি’। আবার অনেক গবেষকের মতে, গ্রামের দক্ষিণে অর্থাৎ ডান দিকে গ্রামের ‘টুকরো সম্পদ’ বৌদ্ধ মন্দিরটি অবিস্থত। তা থেকেই গ্রামের এই নাম।

মন্দির নিয়েও প্রচলিত রয়েছে নানা লোককথা। রংকিনি নামে রাক্ষসী এই মন্দিরে থাকত। গ্রামের মানুষের কাছ থেকে জোর করে নানা ধরনের খাবার আদায় করত সে। প্রতিদিন এক জন করে মানুষও খেত। রাক্ষসীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা। একদিন এক রাখাল যুবকের পালা পড়েছিল রাক্ষসীর কাছে যাওয়ার জন্য। চতুর রাখাল এক বাটি চুনজল দই বলে রাক্ষসীকে খেতে দেয়। চুনজল খেয়ে রাক্ষসীর গলা জ্বলে যায়। তখন রাক্ষসীকে বেধড়ক লাঠিপেটা শুরু করে ওই রাখাল। প্রাণ বাচাতে রাক্ষসী মন্দিরের একটি পাথর সরিয়ে কংসাবতী নদী পেরিয়ে পালিয়ে যায় গ্রাম ছেড়ে। সেই থেকে মন্দিরটি বিগ্রহ শূন্য।

যাতায়াত

লালগড় থেকে ডাইনটিকরি গ্রামের দূরত্ব ৬ কিমি। লালগড় থেকে সাইকেল রিকশা ভাড়া করে যাওয়া যায়। আগ্রহী ভ্রমণার্থীরা সংখ্যায় বেশি হলে ট্রেকার নিয়েও যেতে পারেন।
ঝাড়গ্রাম থেকে ডাইনটিকরির দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। ঝাড়গ্রাম থেকে ভাড়ার গাড়ি নেবে ৫০০/৬০০ টাকা।

ডাইনটিকরি দেখতে হলে, লালগড়ে পৌছে স্থানীয় গবেষক ও গাইড পঙ্কজকুমার মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ (৯৪৩৪৯৯২৪১৭) করতে পারেন। পঙ্কজবাবু বিনা পারিশ্রমিকে গাইডের কাজ করেন।

No comments:

Post a Comment