Friday, 20 April 2012

কালনা (বর্ধমান)



কালনা (বর্ধমান) 

ভাগীরথীর পাড়ে ছোট্ট একটি শহর কালনা। মূলত ধান-চালের ব্যবসার সূত্রে এই শহর ক্রমশ জনিপ্রয় হয়ে ওঠে। অতীতে জলপথ ধরে ধান-চাল এখান থেকে পৌছাত দেশের বিভিন্ন স্থানে। ব্যবসায়ীদের এই শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ঐতিহাসিক মন্দির মসজিদ। টেরাকোটার অপূর্ব কারুকাজে তৈরি বেশির ভাগ মন্দিরই বর্ধমান রাজপরিবারের তৈরি

১.





শহরের মাঝামাঝি স্থানে রয়েছে ১০৮ শিবমন্দির। শিবমন্দিরগুলি দুটি বৃত্তে সাজানো। প্রথম বৃত্তে রয়েছে ৭৪টি মন্দির। ভিতরের বৃত্তে রয়েছে ৩৪টি মন্দির। ১৮০৯ সালে মহারাজ তেজচেন্দ্রর সময়ে নির্মিত মন্দিরগুলির ভিতরে রয়েছে শ্বেতপাথর ও কালো পাথরের শিবলিঙ্গ। আটচালা শৈলীতে নির্মিত এই মন্দিরগুলিকে উচু জায়গা থেকে দেখলে মনে হবে পাপড়ি মেলা পদ্ম।

২. 






১০৮ শিবমিন্দেরর উল্টো দিকে রয়েছে রাজবাড়ি কমেপ্লক্স। এই কমেপ্লেক্সর মধ্যে রয়েছে ২২টি পুরনো মন্দির। এর মধ্যে কয়েকটি মন্দিরের টেরাকোটার কারুকাজ চোখ টানে। ওড়িশার রেখদেউলের আদলে তৈরি হয়েছে প্রতাপেশ্বর মন্দির। বর্ধমান মহারাজ প্রতাপচাদের স্মৃতি রক্ষার্থে মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল। মন্দিরের গায়ে শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা, রাবণের দুর্গাপুজো-সহ নানান পৌরাণিক দৃশ্য খোদিত।

৩. 






এ ছাড়াও রয়েছে ৬০ ফুট উচ্চতার কৃষ্ণচেন্দ্রর মন্দির। মন্দিরটি ২৫ চূড়ার। এই কমেপ্লেক্সর মধ্যে রয়েছে আরও একটি ২৫ চূড়ার মন্দির। সেটির নাম লালজী মন্দির। কথিত আছে ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে রাজমাতা ব্রজকিশোরী দেবীর বৃন্দাবন যাত্রাকে উপলক্ষ করে মন্দিরটি নির্মিত হয়। এ ছাড়াও গিরিগোবর্ধনের মন্দির, লালজী মন্দির, কৃষ্ণচন্দ্রজী মন্দিরের কারুকার্য চোখ ধাধাবে। কমেপ্লেক্সর মধ্যে রয়েছে রংবাহারি ফুলের বাগান। পুরাতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে থাকা বাগানের পরিষেবা মনোরম।

৪. 






রাজবাড়ির বাইরে সিদ্ধেশ্বরী পাড়ায় আছে আর একটি ২৫ চূড়ার মন্দির। গোপাল জীউর মন্দির নামে এই মন্দিরটি ১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত। এই মন্দিরটি প্রথম ধাপে ১২টি, দ্বিতীয় ধাপে ৮টি, তৃতীয় ধাপে ৪টি এবং মূল শিখরে রয়েছে ১টি চূড়া। কালনার ইতিহাস থেকে জানা যায়, দেশের একমাত্র এই শহরেই রয়েছে তিনটি ২৫ চূড়ার মন্দির। এ ছাড়াও জগন্নাথ বাড়ির জোড়া শিবমন্দির, অনন্ত বাসুদেব মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির নজর কাড়বে।
শহরের দঁাতনকাঠিতলায় রয়েছে হাবসি আমলের প্রাচীন মসজিদ। মসজিদ-ই-মজলিস নামে মসজিদটির গঠনশৈলী মন কাড়ে।

শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রাজমাতা মন্দির, মাইজী মন্দির, জগানন্দ মঠ সহ আরও বহু মন্দির।

যাতায়াত

– বাস: উল্টোডাঙা, এসপ্ল্যানেড, বারাসাত স্ট্যাণ্ড থেকে নদিয়া জেলার শান্তিপুরগামী বাসে চেপে শ্যামচাঁদ মোড় অথবা ডাকঘর মোড়ে প্রথমে নামতে হবে। সেখান থেকে ১০ কিলোমিটার দূর কালনা ঘাট। এ ক্ষেত্রে বাস, ট্রেকার অথবা অটো মিলবে। কালনা ঘাট থেকে নৌকায় কালনা শহরে পৌছতে হবে। ঘাটে সরকারি ফেরি চালু থাকে রাত দশটা পর্যন্ত।

– গাড়ি: গাড়িতে নিবেদিতা ব্রিজ, বালি ব্রিজ অথবা দ্বিতীয় হুগলি সেতু পেরিয়ে এক্সেপ্রসওয়ে ধরে হুগলি জেলার গুড়াপে আসতে হবে। এখান থেকে কালনাগামী রাস্তা ধরতে হবে। অথবা দিিল্ল রোড ধরে প্রথমে মগরা, পরে সেখান থেকে এস.টি.কে.কে রোড ধরে কালনা শহরে পৌছনো যায়।

– ট্রেন: হাওড়া স্টেশন থেকে সরাসরি অম্বিকা-কালনা স্টেশনে আসার সারা দিন ট্রেন মিলবে। অথবা হাওড়া থেকে প্রথমে ব্যাণ্ডেল স্টেশন। পরে এখান থেকে ব্যাণ্ডেল-কাটোয়া লাইনের ট্রেন ধরে এই স্টেশনে পৌছনো যায়। সকালে শিয়ালদহ স্টেশন থেকেও ট্রেন মেলে।

আস্তানা

– পান্থনীড়
(কালনা পুরসভা পরিচালিত)
১৩ নম্বর ওয়ার্ড, নেপপাড়া
– হোটেল প্রিয়দর্শিনী
কালনা বাস স্ট্যাণ্ডের সামনে রয়েছে এই হোটেলটি।
ফোন- ০৩৪৫৪-২৫৫৬১৫ মোবাইল- ৯৭৩২০৭৬৬৯০
খরচ- তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা।

আশেপাশে

– বাংলার কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামব্রহ্ম বাড়ি। এখানে রয়েছে বৈষ্ণবগুরু ভগবান দাস বাবাজীর সমাধিস্থল ও সাধন ক্ষেত্র। বাড়ির একপাশে রয়েছে পাতাল গঙ্গা নামে একটি কুয়ো। জনশ্রুতি, বৃদ্ধ বয়সে ভগবান দাস গঙ্গা স্নান করতে যেতে পারতেন না। তখন মা গঙ্গা তাকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে তার বাড়ি চলে আসেন।
– মহাপ্রভু পাড়ায় রয়েছে ‘নিতাই গৌর মন্দির’। এই মন্দিরে নিতাই ও গৌরের দারু মূর্তি রয়েছে। শ্রীচৈতন্য যে নৌকায় কালনায় এসেছিলেন তার বৈঠা এবং মহাপ্রভুর নিজে হাতে লেখা কিছু পুথিও এই মন্দিরে সংরক্ষিত। এ ছাড়াও এই শহরে রয়েছে নিত্যানন্দ প্রভুর শ্বশুরবাড়ি এবং বিবাহস্থল।
— জীবনের বেশির ভাগ সময়টা কালনা শহরে কাটিয়ে ছিলেন ভবা পাগলা। সাধক কবি এখানে তৈরি করেন ভবানী মন্দির। সে মন্দিরে খোদাই করা আছে সাধক কবি স্বরচিত প্রচুর কবিতা ও গান। এই শহরেই রয়েছে আর এক সাধক কবি কমলাকান্তের বাস্তু ভিটা।
– শহরের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলি খুটিয়ে দেখতে সময় লাগবে দু’দিন। এক ঘেয়েমি কাটাতে তৃতীয় দিন যাওয়া যেতে পারে শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে পূর্বস্থলী ব্লকের চুপি গ্রাম। এই গ্রামে ভাগীরথীর ছেড়ে যাওয়া অংশে পঞ্চায়েত সমিতি তৈরি করেছে ‘পাখিরালয়’। দেশ-বিদেশের পরিযায়ী পাখিরা মিষ্টি জলের খোজে এইখানে পাড়ি জমায়। তবে পাখি দেখার জন্য শীতকালকে বাছাই ভাল।
– পাখিরালয়ের কাছাকাছি রয়েছে পিকনিক স্পট। এখান থেকে কাছাকাছি বিদ্যাসাগর গ্রামে রয়েছে মহাপ্রভু বাল্য শিক্ষাস্থল। এবং পণ্ডিত বাসুদেব সার্বভৌমের মন্দির।
– জাহন্নগর গ্রামে গেলে দেখা মিলবে সারঙ্গ মুরারীর আশ্রম এবং চৈতন্য ভাগবৎ রচয়িতা বৃন্দাবন দাসের জন্মস্থান। এই গ্রামের পাশে রয়েছে প্রাচীন চাদের বিল।

মূর্তি (উত্তরবঙ্গ)

মূর্তি (উত্তরবঙ্গ)

এক দিকে গরুমারা, অন্য দিকে খুনিয়া। ঠিক মাঝখানে ‘বনানী’। মূর্তির বনবাংলো। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে মূর্তি নদী। দোতলার ব্যালকনিতে চুপচাপ বসে মোহময়ী মূর্তির চঞ্চলতা, আরণ্যক সৌন্দর্য, জলের কলকল শব্দ শুনলে মন কেমন করবেই। বুনো হাতির জলক্রীড়াও চোখে পড়তে পারে। দিন কাটানো যায় পাখির গান শুনেও।

মূর্তিতেই তৈরি হয়েছে কিশোর কিশোরীদের জন্য মূর্তি ক্যাম্প। দল বেধে সেখানে থাকা, প্রকৃতি বীক্ষণের সুযোগ হাতছাড়া না করাই ভাল। দেখাশোনার সব দায়িত্ব বন দফতরের।


১.                                                                                                                                                                                                                                      মূর্তি থেকে বেড়ানো যায় খুনিয়ার চন্দ্রচূড় মিনার, চাপড়ামারি বনবাংলো, ঈগল নজরমিনার, ওয়াইল্ডারনেস ক্যাম্প, কুমাই, ঝালং, বিন্দু, রকি আইল্যাণ্ড। খোজখবর করে ডুয়ার্সের আরও অনেক নাম না জানা জায়গায় যাওয়া যেতে পারে মূর্তি থেকেই। ফেরার সময়ে বাতাবাড়ি চা বাগান, গরুমারায় যাত্রাপ্রসাদ টাওয়ার দেখতে ভুলবেন না।




২.




যাতায়াত


শিলিগুড়ি থেকে মূর্তি ৮০ কিলোমিটার। শিলিগুড়ির মিত্তাল টার্মিনাস থেকে বাসে চালসা। সেখান থেকে জিপ বা ট্রেকার ভাড়া করা যায়। এন জে পি ও শিলিগুড়ি থেকে সরাসরি গাড়ি ভাড়া নিয়েও যাওয়া যায়।

আস্তানা

১৫ই জুন থেকে ১৫ই সেপ্টেম্বর জঙ্গল বন্ধ। এই সময়টুকু ছাড়া সারা বছরই দরজা খোলা মূর্তি বনবাংলোর। সুসজ্জিত ৯টি দ্বিশয্যার ঘর ছাড়াও এখানে আছে জঙ্গল ও নদীমুখো ২টি কটেজ। এই মনোরম পরিবেশে কয়েকটা ছুটির দিন কাটাতে গেলে আগাম বুকিং করতে হবে। মনে রাখা দরকার, এপ্রিল-মে এবং অেক্টাবর-নভেম্বর মাসে পর্যটক সমাগম বাড়ে।
এই বনবাংলো ছাড়াও রয়েছে ছোট মাপের কটেজ রেতি ও ডায়ানা। হালে আরও একটি কটেজ তৈরি করেছে বন দফতর।
সরকারি উদ্যোগ ছাড়া মূর্তিতে এখন উত্তর ধূপঝোরার গ্রাম পঞ্চায়েত পরিচালিত মূর্তি পর্যটন আবাস, বনশ্রী, ডুয়ার্স নেস্ট, মূর্তি রিভার বেডের মতো জায়গায় থাকা খাওয়ার

ব্যবস্থা। যোগাযোগ:
বীরেন রায়, উত্তর ধূপঝোরা,
ফোন: ৯৭৩৩১ ৫৭৮৩৮
এবং
পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগম
নিগমের ফোন: ০৩৫৩ ২৫১৬৩০৬।
অন লাইন বুকিং করতে হলে: www.wbtourism.com

আশেপাশে

মূর্তির কাছাকাছি বেশ কয়েকটি দর্শনীয় জায়গা আছে। এর মধ্যে ঘুরে আসা যায়:
১০ কিলোমিটার দূরের খুনিয়া নজরমিনার। এখানে দাড়িয়ে দেখা মিলতে পারে বন্য জন্তুর।
জলদাপাড়া অভয়ারণ্য।
১৫ কিলোমিটার দূরের গরুমারা অভয়ারণ্য।
৬ কিলোমিটার দূরের চাপড়ামাড়ি অভয়ারণ্য।

রসুলপুর (বীরভূম)

রসুলপুর (বীরভূম)

 

বীরভূম জেলার পর্যটন মানচিত্রে নতুন নাম শ্রীনিকেতন-বোলপুর ব্লকের রসুলপুর গ্রাম। তবে বাস্তবে ওই নামটি প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। গ্রামটিকে এখন সবাই ‘সবুজ বন’ বলেই চেনেন। বীরভূমে পর্যটন কেন্দ্র বলতে শান্তিনিকেতন আর বাদবাকি ধর্মীয় স্থান। কিন্তু সবুজ বন মূলত হরেক গাছের সংগ্রহশালা। গাছ দিয়ে সাজানো ৮৫ বিঘা জায়গা ও ১৫ বিঘা জলাশয় প্রকৃতি-প্রেমিকদের কাছে অসাধারণ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

১.







শহরের কোলাহল ও শব্দদূষণ থেকে মুক্তি পেতে সবুজ বনে দুচোখ ভরে সবুজ দেখতে ও প্রাণ ভরে অক্সিজেন নিতে প্রতি সপ্তাহের শেষে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। গাছেপ্রমী গবেষকরাও প্রায়ই এখানে আসেন। দেশীয় গাছ ছাড়াও দেখা যায় ব্রাজিলের ল্যাটিনিয়া লুব্রা, আফ্রিকার ৩৭ প্রজাতির সাইক্যাস, মেক্সিকোর নলিনাস, ২৭৪টি প্রজাতির পামগাছ আর প্রচুর অ্যাডেলিয়াম গাছ। সবুজ বনের মালিক আব্দুস সেলিম জানিয়েছেন, দেশ বিদেশের ৪২০০ প্রজাতির গাছ রয়েছে সেখানে। গাছগুলির বিন্যাসও শিল্পসম্মত। ১৭ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে নানা গাছের সমারোহ। তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম নদী। বাশের সাকো দিয়ে সেই নদী পারাপার আনন্দ দেয়। রয়েছে বোটও। বারো মাসই এখানে কোকিলের ডাক শোনা যায়। তালগাছে বাবুই পাখির বাসা এখন দুর্লভ হলেও সবুজ বনে ঝাঁকে ঝাঁকে তাদের দেখা মেলে। নদীতে চড়ছে রাজহাঁসের দল। ইতস্তত চড়ে বেড়াচ্ছে বেপরোয়া কাঠবেড়ালি, বেজি বা নেউল। বনের পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় দেশি কুকুর।

২. 





কটেজের সামনে একফালি সবুজ ঘাসের গালিচা। তার ওপরে খালি পায়ে হাঁটতে হাটতে মনে পড়ে যায় ছেলেবেলার ফেলে
আসা দিনগুলি। বিশ্রাম নেওয়ার জন্য মাঝে মাঝেই সুদৃশ্য ছাউনি আছে। রাতে টিমটিমে বিদ্যুতের আলোয় পুকুরের ওপর বাশের মাচায় বসে আড্ডা মারা ও রাতের খাবার খেতে ভালই লাগবে। সবুজ বনের সামনেই অজয় নদ। তার পাড়ে বসেও কেটে যায় অনন্ত সময়। কাছের ইটিণ্ডা ও সুপুর গ্রামে কয়েকশো বছরের প্রাচীন টেরাকোটার মন্দিরগুলি আকর্ষণীয়। তাদের ইতিহাস জানতে চাইলে অবশ্য শরণাপন্ন হতে হবে বিশেষজ্ঞদের। স্থাপত্যের বিচারে এই ২টি মন্দির বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

৩. 




যাতায়াত


– কলকাতা থেকে ট্রেনে বোলপুর স্টেশনে নেমে গাড়ি ভাড়া করতে হবে। বোলপুর স্টেশন থেকে দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। গাড়ি ভাড়া পড়বে ৩০০ টাকার মতো। আগে থেকে ফোন করে গেলে সবুজ বন কর্তৃপক্ষ গাড়ির ব্যবস্থা করেন। বোলপুর থেকেও প্রচুর গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়।
– বাসেও অবশ্য যাওয়া যায়। বোলপুর- পাচশোয়া- ইক্ষুধারা রুটের বাস ধরে রসুলপুর মোড়ে নেমে ৫০০মিটার হাঁটা রাস্তা।

৪. 



আস্তানা


— এখানে থাকার জন্য রয়েছে মোট ৭টি কটেজ। এর মধ্যে দুটি বাতানুকূল। খড়ের ছাউনি দেওয়া সাধারণ কটেজগুলিতে থাকাও আরামদায়ক।
– বাতানুকূল কটেজের প্রতিটির দৈনিক ভাড়া এক হাজার টাকা। দুটি কটেজে ৪ জন করে থাকা যায়।
– ৫০০ টাকায় কটেজ রয়েছে ২টি। তাতে ৩ জন করে থাকা যায়।
– এখানে সব ধরনের খাবার পাওয়া যায় সুলভ মূল্যে। তবে খাওয়ার ব্যাপারে আগে থেকে জানাতে হবে।
– ৭০০ টাকার ৩টি কটেজের প্রতিটিতে থাকা যায় ৪ জন।
যোগাযোগের ফোন নম্বর: ৯৯৩২৫৮৯২৪৪(মোবাইল), ল্যাণ্ড ফোনের নম্বর : ০৩৪৬৩-৬৪৫০৩৫।
– বিশেষ সতর্কতা: বি এস এন এল মোবাইলের টাওয়ার পাওয়া যায় না।

৫. 




আশেপাশে


– এক-দেড় কিলোমিটার দূরে ইটিণ্ডা ও সুপুর গ্রামে কয়েকশো বছরের প্রাচীন টেরাকোটার মন্দিরও দেখে আসা যায়।

লালজল (মেদিনীপুর)

লালজল (মেদিনীপুর)

 

পাহাড়ের মাঝে ছবির মতো গ্রাম লালজল। বেলপাহাড়ির এই গ্রামে আছে আদিম মানব গুহা-সহ বহু প্রাচীন নিদর্শন। প্রত্ন গবেষকদের ধারণা, কয়েক হাজার বছর আগে লালজলই ছিল প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক সমৃদ্ধ ক্ষেত্র। এখানকার ঝরনার জল সামান্য লালচে। তামা ও লোহা মিশ্রিত জল কিন্তু বেশ সুস্বাদু। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, লাল রঙের এই জলের কারণেই গ্রামটির নাম লালজল।

১. 






বেলপাহাড়ি থেকে বাশপাহাড়ি যাওয়ার পিচ রাস্তা ধরে ১৯ কিমি গেলে পড়ে লালজল মোড়। সেখান থেকে ডান দিকে লাল পাথুরে রাস্তায় পাহাড়ি উতরাই পেরিয়ে ২ কিমি মতো এগোলেই লালজল। চার দিকে পাহাড়ের মাঝে এই গ্রাম। গ্রামের পশ্চিমে দেওপাহাড়ে রয়েছে আদিম মানবের গুহা। দক্ষিণ পূর্ব অংশ জুড়ে সিংলহর পাহাড়ের শ্রেণি। আর গ্রামের উত্তরে রয়েছে রানিপাহাড়।

দেওপাহাড়ে আদিম মানবের গুহাটি দেখতে হলে পাহাড়ের খাজ ধরে সতর্ক ভাবে উঠতে হয়। হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে হয় গুহায়। সঙ্গে টর্চ রাখলে ভাল। কারণ, সেখানে বাদুড় শেয়ালের আস্তানা। গুহার দেওয়ালে খোদাই করা নানা ছবি।

গ্রামবাসীদের মতে, ১৯৬২ সালে রামস্বরূপ নামে এক সন্ন্যাসী লালজলে এসে ওই গুহায় আশ্রয় নেন। সাধুর পোষ্য ছিল একটি চিতাবাঘ। জনশ্রুতি, ওই চিতাবাঘের সঙ্গেই গুহায় বাস করতেন সন্ন্যাসী রামস্বরূপ। ১৯৯৫ সালে রামস্বরূপ মারা গেলে দেওপাহাড়ের কোলেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। রামস্বরূপের উদ্যোগেই লালজল গ্রামে ১৯৮৩ সালে বাসন্তী পুজোর প্রচলন হয়। এখনও চল রয়েছে সেই পুজোর। সে সময়ে পাচ দিনের মেলা বসে লালজলে।

২. 




যাতায়াত


– লালজল যেতে হলে পর্যটকদের ঝাড়গ্রামে আসতে হবে। ঝাড়গ্রাম থেকে লালজলের দূরত্ব ৬২ কিলোমিটার। ভাড়ার গাড়িতে শুধু লালজল গেলে খরচ পড়বে এক হাজার টাকা। তবে ভাড়ার গাড়িতে প্যাকেজ ট্যুর করলে লালজল-সহ অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলি দেখতে খরচ পড়বে ১৫০০ টাকা।

আস্তানা

কাছাকাছি থাকার জায়গা বলতে ঝাড়গ্রাম:

রেল স্টেশনের সামনেই রয়েছে ঝাড়গ্রাম পর্যটন অনুসন্ধান কেন্দ্র (ফোন নম্বর: ০৩২২১-২০৫২০২)।
এখানে ফোন করে যে কোনও তথ্য ও হোটেল, গাড়ি বুকিং করা যায়।
ঝাড়গ্রাম শহরে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে লজ-হোটেলগুলিতে ডবল বেড (অ্যাটাচড্‌ বাথরুম) ঘর পাবেন।
এ ছাড়া ৬০০, ৮০০ থেকে ১৩৫০ টাকার মধ্যে বাতানুকূল ডবল বেড রুম পাবেন।

ঝাড়গ্রাম পুরসভার বনানী অতিথি নিবাস ( ফোন: ০৩২২১-২৫৭৯৪৫)। ‘বনানী’র ম্যানেজার অঞ্জন ঘোষের মোবাইলে ফোন করেও (৯৮৩২৭৯১২৭০) রুম বুক করা যাবে। এখানে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে ডবল বেড ভাল ঘর পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ৬০০ টাকায় বাতানুকূল ঘর এবং ৮০০ টাকায় বাতানুকূল ভি আই পি স্যুইট পাবেন। বনানীর নিজস্ব প্যাকেজ ট্যুরও আছে। খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও ভাল।

বেলডাঙ্গা (বাকুড়া)

বেলডাঙ্গা (বাকুড়া) 

 

সোনামুখী বনবাংলো থেকে রাঙামাটির আকাবাকা সামান্য পথ পেরোলেই বেলডাঙা। জঙ্গল লাগোয়া ছোট্ট ড্যাম। সেখানেই একটা জলাশয়কে ঘিরে রয়েছে বেলডাঙা প্রকৃতি উদ্যান। সেপ্টেম্বরে দলমা পাহাড় থেকে খাবার জলের সন্ধানে কখনও কখনও হাতির পাল নেমে আসে এই জঙ্গলে, এই জলাশয়ে।

১. 

 

 

 

 

হিস্ত দর্শন যদি নাও হয়, বাচ্চাদের নিয়ে প্যাডেল বোটে জলে ভাসুন। তারপর সেন্ধ নামার আগেই হাটা পথে অথবা গাড়িতে ফিরুন বাংলোয়। রাত যত গাঢ় হবে শোনা যাবে হায়না বা শেয়ালের ডাক। গাছের পাতার খসখস শেব্দ মালুম হবে আরও কত বন্য জন্তুর আনাগোনা। দিনের বেলায় ওই গভীর অরণ্যের সঙ্গে যখন হবে আপনার ঘনিষ্ঠ মিতালি, চোখে পড়তেও পারে ময়ূর অথবা হরিণ। দুপাশে অরণ্য মোড়া কালো পিচ রাস্তা ফুড়ে ছুটে যায় নেউল, সাদা খরগোশ।

২. 

 

 

 

 

বিস্তৃত শাল জঙ্গলকে ঘিরে কত না গাছগাছালি। বট, অশ্বত্থ, আম, জাম, শিমুল। পায়ের কাছে লজ্জাবতী লতা। তিনটে দিন সবুজ প্রান্তে এমন ভ্রমণ ভাল লাগার কথা। যদি পূর্ণিমার সময় হিসেব কষে আসা হয় তা হলে তো কথাই নেই। মাথার ওপরে সবুজ দিগেন্ত আলো ঠিকরে দেওয়া এক টুকরো চাদ। বাংলোর বারান্দা থেকে তার রূপ আস্বাদন করা যাবে অনেক রাত পর্যন্ত।

৩.

 

 

 

 

 

যাতায়াত
– হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে বর্ধমান। সেখান থেকে বাকুড়ার বাস ধরে সোনামুখী।
– সরাসরি সোনামুখীর বাসও পাওয়া যায়। জনপ্রতি হাওড়া থেকে ভাড়া পড়বে ৪০ টাকা।

আস্তানা

– সোনামুখী রেেঞ্জর বনবাংলো
ডি এফ ও, বাকুড়া (উত্তর)
ফোন: ০৩২৪২-২৫০৭৫৮
৩ জনের দৈনিক ভাড়া ৪০০ টাকা। এক জন চৌকিদার আছেন। তাকে খরচপাতি দিলে রান্নার ব্যবস্থা করে দেন।
– সোনামুখী পুর আবাসিক ভবন
ম্যানেজার, সোনামুখী,
পুর আবাসিক ভবন,
ফোন: ০৩২৪৪-২৭৫৯৬০
সেখানে ডবল বেড রয়েছে ৮টি। ভাড়া ঘর প্রতি ১২৫ টাকা। ডর্মিটরিতে রয়েছে ১০টি বেড। বেডপ্রতি ভাড়া ৪০ টাকা।
খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। তবে সামনেই খাওয়ার হোটেল। দুবেলা সেখানে খেয়ে হোটেলে ঢুকতে হবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, এমন নৈঃশব্দ ভ্রমণে সোনামুখী বনবাংলো উপযুক্ত জায়গা। কিন্তু একান্তে থাকার ব্যবস্থা না হলে সোনামুখী পুর আবাসিক ভবনই ভরসা। তিন দিনের ট্যুরে জনপ্রতি আনুমানিক খরচ ন্যূনতম ৫০০ টাকা। অতএব, বেরিয়ে পড়া যায় কর্মক্লান্ত কলকাতার খুব কাছে বেলডাঙ্গার নিভৃত জঙ্গলে।

৪.

 

 

 

 

 

আশেপাশে

সোনামুখী শহরের ভেতরে পচিশ চূড়াযুক্ত টেরাকোটা অলংকৃত শ্রীধর মন্দির। স্থাপিত ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে।
১৮৩৫-এ তৈরি গিরিগোবর্ধন মন্দিরটিও দর্শনীয়।
জৈন তীর্থঙ্করের মূর্তি সমিন্বত স্বর্ণমুখী দেবীর মন্দির। যার নাম থেকেই সোনামুখী শহরের নামকরণ।
কোম্পানি আমলের নীলকুঠির ধ্বংসচিহ্ন। রামনবমীতে এখানে মনোহর দাসের মেলা বসে।
জমে ওঠে বাউল আখড়া। এ ছাড়া কালী ও কার্তিক পুজো এখানে এতই বিখ্যাত, সেখানে ঢল নামে মানুষের।

Thursday, 19 April 2012

ফাসিডাঙা (মেদিনীপুর)

ফাসিডাঙা (মেদিনীপুর)

ঐতিহাসিক শহর চন্দ্রকোনার অদূরে এই নীলগঞ্জ এলাকায় ইংরেজ আমলে বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। আজও রয়ে গেছে ফাসির মঞ্চটি। আর দেশের জন্য বলিপ্রদত্ত সেই বীর সেনানীদের স্মৃতিতে জায়গাটির নাম হয়েছে ফাসিডাঙা।

 ১।

 

 

 

 

 

 

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এই জনপদ একটা সময় জমিদারদের অধীনে ছিল। সপ্তদশ শতকের শেষ এবং অষ্টাদশ শতকের শুরুতে তৎকালীন জমিদাররা ইংরেজদের অস্বাভাবিক করের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। প্রজারাও এই লড়াইয়ে অংশও নেন ও পরবর্তী কালে তা ব্যাপ্ত হয় চূয়াড় বিদ্রোহ হিসেবে।

ইংরেজ শাসকরাও বিদ্রোহীদের আতুড়ঘরে আক্রমণ করে। ঘন শালের জঙ্গলে একে একে বিদ্রোহীদের ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। শতাধিক বিদ্রোহী শহিদ হন।

যাতায়াত ও আস্তানা
হাওড়া থেকে চন্দ্রকোনা টাউন। চন্দ্রকোনা টাউন থেকে ফাঁসিডাঙা। হাওড়া থেকে চন্দ্রকোনা টাউন তিন ভাবে আসা যায়:

(ক) হাওড়া আন্তঃজেলা বাসস্ট্যাণ্ডের ‘দিঘা বাসস্ট্যাণ্ড’ থেকে ‘হাওড়া-চন্দ্রকোনা’, ‘হাওড়া-চন্দ্রকোনা রোড’, ‘হাওড়া-গোয়ালতোড়’ কিংবা ‘হাওড়া- গড়বেতা’ বাস ধরে চন্দ্রকোনা টাউনের ‘গাছশীতলা মাড়ো’- তে নামতে হবে। ওখান থেকে রিকশা বা ট্যািক্সতে ফাঁসিডাঙা।

‘হাওড়া-চন্দ্রকোনা’, ‘হাওড়া-চন্দ্রকোনা রোড’, ‘হাওড়া-গোয়ালতোড়’ কিংবা ‘হাওড়া-গড়বেতা’ সরাসরি বাস না পেলে ‘হাওড়া-ঘাটাল’, ‘হাওড়া-খড়ার’, মোট কথা ঘাটালগামী কোনও বাসে ঘাটালে নামতে হবে। ঘাটাল থেকে চন্দ্রকোনা টাউনগামী বাস চেপে চন্দ্রকোনা টাউনের ‘গাছশীতলা মাড়ো’- তে নামতে হবে। প্রয়োজনে ঘাটাল শহরে নেমে রাত কাটানো যেতে পারে। ঘাটাল শহরের কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যাণ্ডেই লজ রয়েছে। হাওড়া থেকে চন্দ্রকোনা টাউনের ‘গাছশীতলা মাড়ো’ পর্যন্ত মোট পথ ১২৪ কিমি। বাসে মাথাপিছু ভাড়া ৫৫ টাকা। লজে মাথাপিছু ভাড়া: ১০০ টাকা। খাওয়া: নিজের মতো।

চন্দ্রকোনা টাউনের ‘গাছশীতলা মাড়ো’ থেকে ফাঁসিডাঙা ভাড়া- রিকশা: ২৫ টাকা। ট্যািক্স: ১০০ টাকা।

(খ) প্রাইভেট কার: ধর্মতলা থেকে কোনা এক্সেপ্রসওয়ে ধরে মুম্বই রোড। মুম্বই রোডের মেচোগ্রামের ক্রসিং পার হয়ে ‘গাছশীতলা মাড়ো’। দূরত্ব ১২৪ কিমি।

(গ) হাওড়া থেকে ট্রেনে পাশকুড়া। পাশকুড়া থেকে বাসে ঘাটাল হয়ে ‘গাছশীতলা মাড়ো’। ভাড়া: ট্রেন: ১৫ টাকা। বাস: ২৫ টাকা।

 

ডাইনটিকরি (মেদিনীপুর)

ডাইনটিকরি (মেদিনীপুর)

পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড় ব্লকের ডাইনটিকরি গ্রামে রয়েছে প্রাচীন এক বৌদ্ধ মন্দির। মাকড়া (ঝামা) পাথরে তৈরি মন্দিরটি উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে এখন ধ্বংসের মুখে। কংসাবতী লাগোয়া ডাইনটিকরিতে নদীর ধারেই রয়েছে মন্দিরটি। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, যে ভাবে পাড় ভাঙতে ভাঙতে নদী এগিয়ে আসছে, তাতে প্রাচীন যুগের এই নিদর্শনটি যে কোনও দিন নদীগর্ভে তলিয়ে যেতে পারে। বৌদ্ধ এই মন্দির বা উপাসনালয়টিকে নিয়ে স্থানীয় ও বাইরের একাধিক গবেষক ক্ষেত্র-সমীক্ষা করেছেন। মন্দির বাচাতে গ্রামবাসীরা প্রশাসনের নানা মহলে স্মারকলিপিও দিয়েছেন। কিন্তু সংস্কার-সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়নি।

১।

 

 

 

 

 

 

খ্রিস্টীয় একাদশ-দ্বাদশ শতকে মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল বলে অনুমান। মন্দির পূর্বমুখী। চৌকো, আয়তাকার ঝামা পাথর অনুপম জ্যামিতিক ধাচে স্তরে স্তরে সাজিয়ে মন্দিরটি তৈরি হয়েছে। দু’টি পাথরের মাঝে সিমেন্ট জাতীয় কিছু ব্যবহার করা হয়নি। মন্দিরের চূড়ায় ন’টি ধাপ। ভেতরের ছাদটি লহড়া পদ্ধতিতে নির্মিত। বিগ্রহহীন মন্দিরের প্রবেশপথে বর্তমানে কোনও

দরজা না থাকলেও অনেক আগে লোহার দরজা ছিল বলে ধারণা। মন্দিরের সামনে রয়েছে মাটির ঢিবি। অনুমান, সেটির ভেতর প্রত্নতািত্ত্বক নিদর্শনও থাকতে পারে। মন্দিরে যে আগে যাগযজ্ঞ হত, তার প্রমাণস্বরূপ আশেপাশে প্রাচীন পাত্রের ভাঙা অংশ ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। মন্দিরের নীচে একটি সুড়ঙ্গ কংসাবতীর তীর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। যদিও কালের গর্ভে ওই সুড়ঙ্গপথ এখন মাটিচাপা পড়ে গিয়েছে।

জনশ্রুতি, এই অঞ্চলে আগে ডাইনিরা থাকত। গ্রামের লোকজন তাদের টুকরো টুকরো করে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। সেই থেকেই নাকি গ্রামের নাম প্রথমে হয় ‘ডাইন টুকরি’ পরে ‘ডাইনটিকরি’। আবার অনেক গবেষকের মতে, গ্রামের দক্ষিণে অর্থাৎ ডান দিকে গ্রামের ‘টুকরো সম্পদ’ বৌদ্ধ মন্দিরটি অবিস্থত। তা থেকেই গ্রামের এই নাম।

মন্দির নিয়েও প্রচলিত রয়েছে নানা লোককথা। রংকিনি নামে রাক্ষসী এই মন্দিরে থাকত। গ্রামের মানুষের কাছ থেকে জোর করে নানা ধরনের খাবার আদায় করত সে। প্রতিদিন এক জন করে মানুষও খেত। রাক্ষসীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা। একদিন এক রাখাল যুবকের পালা পড়েছিল রাক্ষসীর কাছে যাওয়ার জন্য। চতুর রাখাল এক বাটি চুনজল দই বলে রাক্ষসীকে খেতে দেয়। চুনজল খেয়ে রাক্ষসীর গলা জ্বলে যায়। তখন রাক্ষসীকে বেধড়ক লাঠিপেটা শুরু করে ওই রাখাল। প্রাণ বাচাতে রাক্ষসী মন্দিরের একটি পাথর সরিয়ে কংসাবতী নদী পেরিয়ে পালিয়ে যায় গ্রাম ছেড়ে। সেই থেকে মন্দিরটি বিগ্রহ শূন্য।

যাতায়াত

লালগড় থেকে ডাইনটিকরি গ্রামের দূরত্ব ৬ কিমি। লালগড় থেকে সাইকেল রিকশা ভাড়া করে যাওয়া যায়। আগ্রহী ভ্রমণার্থীরা সংখ্যায় বেশি হলে ট্রেকার নিয়েও যেতে পারেন।
ঝাড়গ্রাম থেকে ডাইনটিকরির দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। ঝাড়গ্রাম থেকে ভাড়ার গাড়ি নেবে ৫০০/৬০০ টাকা।

ডাইনটিকরি দেখতে হলে, লালগড়ে পৌছে স্থানীয় গবেষক ও গাইড পঙ্কজকুমার মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ (৯৪৩৪৯৯২৪১৭) করতে পারেন। পঙ্কজবাবু বিনা পারিশ্রমিকে গাইডের কাজ করেন।

চিল্কাগড় (মেদিনীপুর)

চিল্কাগড় (মেদিনীপুর)


অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি চিল্কাগড়ের সামন্ত রাজা গোপীনাথ সিংহ মত্তগজ স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে তার তিন রানির হাতের কঙ্কন দিয়ে তৈরি করেন দেবী কনকদুর্গার মূর্তি। দেবী চতুর্ভুজা, অশ্ববাহিনী। দেবীর ওপরের বাম হাতে খর্পর, নীচের বামহাতে অশ্বের লাগাম। উপরের দক্ষিণ হেস্ত খড়্গ, নীচের দক্ষিণ হেস্ত বরাভয়। সালঙ্কারা দেবীর অঙ্গে নীলবস্ত্র।
আশ্বিন মাসের শুক্লা সপ্তমীতে চিল্কিগড়ের জঙ্গলে কনকদুর্গার মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়। রাজা গোপীনাথ ও তার পাটরানি গোবিন্দমণির কন্যা সুবর্ণমণির বিয়ে হয় ধলভূম পরগনার সপ্তম জগন্নাথ দেও ধবলদেবের সঙ্গে। পরে সপ্তম জগন্নাথ দেও ধবলদেব ও সুবর্ণমণির জ্যেষ্ঠ পুত্র কমলাকান্ত দেও ধবলদেব চিল্কিগড়ের রাজা হন। তার পর থেকে বংশানুক্রমে ধবলদেব বংশের উত্তরসূরিরা মন্দিরের সেবার দায়িত্ব পান। দেবীর প্রতিষ্ঠাতা রাজা গোপীনাথ সিংহ মত্তগজ ওড়িশা থেকে রামচন্দ্র ষড়ঙ্গী নামে এক ব্রাহ্মণকে দেবী পূজার দায়িত্ব দেন। অদ্যাবধি রামচন্দ্র ষড়ঙ্গীর বংশধরেরা মন্দিরের পূজারীর দায়িেত্ব আছেন। তবে, ১৯৬০ সালে কনকদুর্গার সোনার মূর্তিটি চুরি হয়ে যায়। এর পর তিন দশকেরও বেশি সময় মূর্তিহীন মন্দিরেই দেবীর পুজো হতে থাকে। রাজ বংশের উত্তরসূরিদের

উদ্যোগে ১৯৯৬ সালে অষ্টধাতুর কনকদুর্গার একটি মূর্তি (রেিপ্লকা) মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই মূর্তিতেই এখন পুজো চলছে।

১। 

 

 

 

 

 

 

কনকদুর্গার মন্দিরের চারপাশে ৬৪ একর এলাকা জুড়ে শ্যামল অরণ্যানী সত্যিই মনোরম। রয়েছে বহু পুরনো শাল, মহুল, কেঁদ, বট, অশ্বত্থ, ঁসিদুর, রুদ্রাক্ষ, আমলকি, হরতুকি, বহেড়া, চালতা, হাড়ভাঙা গাছ। আছে ১০৮ রকমের দুষ্প্রাপ্য ভেষজ গাছ-গাছড়ার সমারোহ। মন্দিরের ধারে ছোট ডুলুং নদীর জল একেবেকে সাপের ফনার মতো ফুসে চলেছে।

যাতায়াত

মূলত ঝাড়গ্রাম থেকেই চিল্কিগড় যাওয়া ভাল। ঝাড়গ্রাম থেকে চিল্কিগড়ের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার।
ঝাড়গ্রাম থেকে রুটের অনেক ট্রেকার চিল্কিগড় যায়। জনপ্রতি ভাড়া আট টাকা।
ঝাড়গ্রাম থেকে ভাড়ার গাড়ি বুক করে চিল্কিগড় বেড়ানোর খরচ ৪০০ টাকা।

আস্তানা

চিল্কিগড় রাজবাড়ির কাছেই থাকার জায়গা
যোগাযোগ: বিজয়েশ চন্দ্র ধবলদেব, মোবাইল: ৯৪৭৪৪৪৫৯৯৬ অথবা ৯৭৩৫৭৯৩৪৫০
এখানে কোনও ঘরেই অ্যাটাচড্‌ বাথরুম নেই। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা একসঙ্গে। জনপ্রতি খরচ দৈনিক ২৫০ টাকা।

দৃষ্টি আকর্ষণ

ঝাড়গ্রাম মহকুমার ৪২ টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিশদ তথ্য সম্বলিত সচিত্র পর্যটন সহায়িকা ‘অরণ্যের আহ্বান’
নামে একটি বই আছে। এটির প্রকাশক ঝাড়গ্রাম পুরসভা। ঝাড়গ্রাম পর্যটন অনুসন্ধান কেেন্দ্র বইটি পাওয়া যায়।
আগ্রহী পর্যটকরা ডাকযোগেও বইটি সংগ্রহ করতে পারেন।
যোগাযোগ:
প্রদীপ কুমার সরকার, পুরপ্রধান, ঝাড়গ্রাম পৌরসভা,
পো: ঝাড়গ্রাম, জেলা: পশ্চিম মেদিনীপুর, পিন: ৭২১৫০৭
ফোন: ০৩২২১-২৫৫০৯৮ মোবাইল: ৯৪৩৪৩২০৪৭২

মুর্শিদাবাদ

মুর্শিদাবাদ 

মুর্শিদাবাদের ইতিহাস বলতেই আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে গড়ে ওঠা বাংলার প্রথম স্বাধীন সার্বভৌম গৌড় রাজ্যের রাজধানী বহরমপুর থেকে মাত্র আট কিমি দূরে কর্ণসুবর্ণ নগরী, আবার এখানেই বাংলা তথা ভারতের স্বাধীনতার সূর্যােস্তর সূচনা হয় ১৭৫৭ সালে। ১৮৫৭ সালে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের অর্থাৎ সিপাহি বিদ্রোহের সূচনা হয় এখানেই। ফকির, ফরাজী, নীল, সাওতাল, তেভাগা প্রভৃতি কৃষক-স্বাধীনতা-অসহযোগ-ভারত ছাড়ো আন্দোলন-সহ সশস্ত্র বিপ্লবীদের গোপন পদচারণায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠা মুর্শিদাবাদের মাটি।

১। 

 

 

 

মুর্শিদাবাদ শহরে হাজারদুয়ারি প্রাসাদ। ভাগীরথীর পূর্বতীরে অনেকটা জায়গা নিয়ে কিল্লা নিজামত, প্রাক্তন নবাবদের বাসস্থান ও কার্যালয়। কিল্লা নিজামতের উত্তর অংশে এই হাজারদুয়ারি প্রাসাদ। এই তিন তলা বিশাল অট্টালিকা বড়কুঠি নামে পরিচিত। প্রাসাদটি নির্মাণ করেন নাজিম হুমায়ুন জা (১৬২৪-১৮৩৮)। প্রাসাদের নির্মাণ কাল ১৮২৯ থেকে ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দ। জেনারেল ডানকান ম্যাকলিয়ড-এর পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানে ইতালীয় স্থাপত্যের এই বিশাল প্রাসাদটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা যথাক্রমে ১৩০, ৬০ ও সাড়ে ২৪ মিটার। প্রাসাদে এক হাজার দরজা থাকায় এর নাম হাজারদুয়ারি। অবশ্য এই হাজার দরজার মধ্যে বেশ কিছু নকল দরজাও রয়েছে।

২।

 

 

 

 

 

প্রাসাদের নানা কক্ষে বিশেষ দর্শনীয় পৃথিবীর বিখ্যাত শিল্পীদের আকা নানা আকার ও বর্ণের ছবি, কালানুক্রমিক বিভিন্ন নবাবদের চিত্র, নানা বিষয়ে সংগৃহীত মূল্যবান তৈজসপত্র ও বিলাসদ্রব্যাদি, গ্রন্থাগার এবং অস্ত্রাগার। গ্রন্থাগারে বহু বিচিত্র ও বিস্ময়কর কোরানের পুথি, আইন-ই-আকবরি আকবরনামা, শাহনামা সমেত বহু মূল্যবান পুথিও এখানে রক্ষিত আছে। আকবরনামার পুথিটি আবুল ফজলের স্বহস্তলিখিত। তবে গ্রন্থাগার সকলের জন্য উন্মুক্ত নয়। দরবার কক্ষটি সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয়। এই কক্ষের অভ্যন্তরে একটি বিশাল ঝাড়বাতি উল্লেখযোগ্য।

৩। 

 

 

 

 

হাজারদুয়ারি ছাড়াও কিল্লা নিজামতের মধ্যে আরও কিছু দর্শনীয় স্থান আছে। কেল্লার দক্ষিণপ্রান্তে দক্ষিণ দরওয়াজা, পূর্বতন প্রবেশদ্বার। কেল্লায় প্রবেশের আরও দুটি প্রধান প্রবেশদ্বার, পূর্ব দিকে চক দরওয়াজা ও উত্তর দিকে ইমামবাড়া দরওয়াজা। এখন চক দরওয়াজা প্রধান প্রবেশ ও নিষ্ক্রমণ পথ। ডক দরওয়াজা দিয়ে প্রবেশ করে দক্ষিণ দিকে নবাব ওয়াসিফ আলি মির্জা নির্মিত নতুন প্রাসাদ ওয়াসিফ মিঞ্জল। এখানেও নবাবি আমলের কিছু দর্শনীয় বস্তু রয়েছে।

৪।

 

 

 

 

 

হাজারদুয়ারির উত্তরে কেল্লার উত্তর সীমানায় ২০৭ মিটার দীর্ঘ বাংলার বৃহত্তম ইমামবাড়া। হাজারদুয়ারি এবং ইমামবাড়ার মধ্যে বিস্তৃত প্রাঙ্গণে একটি ঘড়িঘর ও সিরাজউদ্দৌলা নির্মিত ইমামবাড়ার ‘মেদিনা’ বা ‘মদিনা’ অংশটি এখনও বর্তমান। সিরাজউদ্দৌলার এই একটি কীর্তিই এখন অবশিষ্ট রয়েছে।

মদিনার কাছেই বাচ্চাওয়ালি তোপ। বিশেষজ্ঞেদর মতে, এই কামানটি সম্ভবত, ১৩-১৪ শতকে গৌড়ের কোনও সুলতানি আমলের।

৫। 

 

 

 

 

কেল্লার বাইরে চক দরওয়াজার দক্ষিণে ‘চক মসজিদ’ বা ‘বেগম মসজিদ’। মুর্শিদকুলি খার (১৭০৪-১৭২৫) নির্মিত পূর্বতন ‘চেহেল সেতুল’ (৪০ স্তেম্ভর প্রাসাদ) নামে দরবার হলের স্থানে মোগল স্থাপত্যের উৎকৃষ্ট নিদর্শন এই মসজিদ ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করেন নবাব মিরজাফরের পত্নী মণি বেগম।

৬। 

 

 

 

 

চক বাজারের উত্তরে মুর্শিদকুলি খার জামাতা নবাব সুজাউদ্দৌলা (১৭২৮-৩৯) ‘ত্রিপোলিয়া তোরণ’ নির্মাণ করেন।

হাজারদুয়ারি থেকে এক কিমি দূরে শ্যামপুর-হায়দারগঞ্জ অঞ্চলে মুর্শিদকুলি খার কন্যা আজিমউেন্নসার সমাধি। প্রাসাদ থেকে দেড় কিমি দূরে জাফরাগঞ্জ। এখানে রাস্তার পূর্ব দিকে মিরজাফর ও অন্যান্য নবাব নাজিমদের সমাধিস্থল জাফরাগঞ্জ সমাধি ক্ষেত্র।

৭।

 

 

 

 

 

জাফরাগেঞ্জর সমাধির বিপরীতে মিরজাফরের দাফরাগঞ্জ প্রাসাদ। জাফরাগঞ্জ দেউড়ি (লোকমুখে নিমকহারাম দেউড়ি) নামে সুন্দর কারুকাজ করা তোরণের মধ্যে এখানে প্রবেশ করতে হয়। এখানে মিরজাফরের পুত্র মিরনের বংশধরগণ বাস করেন। বিস্তৃত আঙিনার উত্তর-পূর্ব অংশে যে গৃহের মধ্যে সিরাজেদ্দৗলাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছিল, সেটি এখন লুপ্ত। এই প্রাসাদেই সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং পলাশির যুদ্ধের পূর্বে মিরজাফর ও ইংরেজদের মধ্যে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়।

৮। 

 

 

 

 

 

 

জাফরাগঞ্জ প্রাসাদ থেকে এক কিমি উত্তরে নশিপুর রাজবাড়ির কাছে রাস্তার পশ্চিম দিকে রামানুজ সম্প্রদায়ের নশিপুর আখড়া। ১৭৬১ সালে এই আখড়ার প্রাসাদোপম মন্দিরে লক্ষ্মীনারায়ণ ও অন্যান্য বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত।



 

 

 

 

 

ওই রাস্তার পূর্ব দিকে নশিপুর রাজপ্রাসাদ। নশিপুরের রাজা কীর্তিচাদ বাহাদুর উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে পাশ্চাত্য স্থাপত্য রীতিতে এই বৃহৎ প্রাসাদ নির্মাণ করেন। প্রাসাদ সংলগ্ন ঠাকুর বাড়িতে সুউচ্চ পচিশ চূড়া বিশিষ্ট রামচন্দ্র মন্দির। প্রাসাদ এখন জীর্ণ ও ধ্বংসপ্রায়।

নশিপুরের এক কিমি দক্ষিণপূর্বে কাঠগোলা। জিয়াগেঞ্জর ধনকুবের রাজা ধনপৎ সিংহ দুগার ও লক্ষ্মীপৎ সিং দুগার ১৮৭৩ সালে এখানে একটি সুরম্য প্রাসাদ ও আদিনাথের বিখ্যাত মন্দিরটি নির্মাণ করেন।

কাঠগোলার এক কিমি দক্ষিণে রেলপথের পূর্ব দিকে কুমারপুর অঞ্চলে অসমাপ্ত ‘ফুটি মসজিদ’ অবিস্থত। মুর্শিদকুলি দৌহিত্র নবাব সরফরাজ খা (১৭৩৯-৪০) মসজিদটি নির্মাণ করেন। অসমাপ্ত হলেও স্থাপত্যের দিক দিয়ে এটি একটি উল্লেখযোগ্য মসজিদ।

মুর্শিদাবাদ রেলেস্টশন থেকে দেড় কিমি উত্তর-পূর্বে বহরমপুর-লালগোলা রাজ্য সড়কের পাশে বিশাল ‘কাটরা মসজিদ’। নবাব মুর্শিদকুলি খা ১৭২৩ সালে ৫টি সুবৃহৎ গম্বুজ ও দুটি উচ্চ মিনার বিশিষ্ট বাংলার দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিশাল মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদের সম্মুখে বিরাট চত্বরে উঠবার ঁসিড়ির নিচে নবাব মুর্শিদকুলি কার অনাড়ম্বর সমাধি।

কাটরা থেকে এক কিমি দক্ষিণ-পূর্বে গোবরা নালার তীরে তোপখানা। মুর্শিদাবাদের প্রতিরক্ষার জন্য এখানে যে অস্ত্রাগার ছিল, তারই নিদর্শন জাহানকোষা (জগজ্জয়ী) কামান। সাড়ে ১৭ ফুট লম্বা এই কামানটি সুবেদার ইসলাম খার আমলে (১৬০৮-১৩) ঢাকার কারিগর জনাদ্দর্ন কর্মকার নির্মাণ করেন।

লালবাগ কোর্ট থেকে এক কিমি দক্ষিণে লালবাগ-বহরমপুর সড়কের কিছু পূর্বে মতিঝিল। আলিবর্র্দি খার জ্যেষ্ঠ জামাতা ঘসেটি বেগমের (মেহেরুেন্নসা) স্বামী নবাব নওয়াজেস মহম্মদ খা এই অতি সুদৃশ্য ঝিল এবং তার তীরে ‘সাংহী দালান’ নামে এক প্রাসাদ নির্মাণ করেন। এখন তা অবলুপ্ত। নওয়াজেস খা (১৭৫০-৫১) ‘কালা মসজিদ’ নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। যা মতিঝিল মসজিদ নামেও পরিচিত। মসজিদ চত্বরে নওয়াজেস মহম্মদ খা ও সিরাজের কনিষ্ঠ ভ্রাতা এক্রামউদ্দৌলার সমাধি রয়েছে।

লালবাগ সদর ঘাট থেকে এক কিমি দক্ষিণে ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে খোশবাগ। এখানে নবাব আলিবর্র্দি (১৭০৪-৫৬) ও সিরাজউদ্দৌলার সমাধি ছাড়াও সিরাজের বেগম লুৎফুেন্নসা, সিরাজের অনুজ মির্জা মহম্মদের সমাধি রয়েছে।

ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে ডাহাপাড়ায় অতীতের আর কিছু নেই। তবে এখন জগদ্বন্ধু আশ্রমটি ডাহাপাড়ার অতীত গৌরব রক্ষা করছে।

ডাহাপাড়া থেকে প্রায় চার কিমি পশ্চিমে কিরীটেশ্বরী মন্দির মুর্শিদাবাদের প্রাচীনতম দেবস্থান। এখানে দেবীর কিরীট পড়েছিল বলে এটি একটি পীঠস্থান বা মতান্তরে উপপীঠ।

লালবাগ সদর ঘাট থেকে প্রায় ৪ কিমি পশ্চিমে ভট্টমাটি বা ভট্টবাটিতে অবিস্থত পোড়ামাটির তৈরি পঞ্চরত্ন রেত্নশ্বর শিব মন্দির।

যাতায়াত

কলকাতা থেকে বহরমপুর ১৯০ কিমি পথ।
– সড়ক পথে কলকাতা এসপ্ল্যানেড থেকে সরকারি বা বেসরকারি বাসে বহরমপুর।
– রেলপথে শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে বহরমপুর স্টেশন।
– বহরমপুর থেকে মুর্শিদাবাদ শহরের দূরত্ব ১৬ কিমি। স্টেশন থেকে মুর্শিদাবাদ শহরে যাওয়ার জন্য অটো-ট্রেকার-বাস রয়েছে।
– মুর্শিদাবাদ শহরে পৌছে ঘোড়ায় টানা টাঙ্গা রিকশায় চড়ে ঘুরে বেড়ানো যেতে পারে।

আস্তানা

বহরমপুরে নামী-দামি বিভিন্ন হোটেল ছাড়াও সরকারি ট্যুরিস্ট লজ রয়েছে।
মুর্শিদাবাদেও হাজারদুয়ারি লাগোয়া ভাগীরথীর তীরে বেশ কিছু হোটেল রয়েছে।
এখানে রয়েছে যুব আবাসও। যুব আবাসে থাকার জন্য আগাম ঘর বুকিং করতে হবে।
সরকারি লজে বুকিং-এর জন্য যোগাযোগ করুন:
পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগম
৩৩/২ বি বা দী বাগ (পূর্ব)
কলকাতা-৭০০ ০০১
ফোন: (০৩৩) ২২৪৩ ৭২৬০, (০৩৩) ২২১০ ৩১৯৯
মোবাইল: ৯৮৭৪০ ২৬৯১৪, ৯৮৩৬৭ ৬৯১৯৬
যুব আবাস ছাড়া সব ক্ষেত্রেই এসি-নন এসি ঘর রয়েছে। ডর্মিটারির সুবিধাও মিলবে।

মাইথন (বর্ধমান)

মাইথন (বর্ধমান) 

নদী, জঙ্গল এবং পর্বতমালা। প্রকৃতির এই তিন শোভা একসঙ্গে উপভোগ করা যায় বর্ধমান জেলার মাইথনে। পশ্চিমবঙ্গ- ঝাড়খণ্ড সীমান্তের এই শহরটি মূলত জলবিদ্যুৎ কেেন্দ্রর জন্য পরিচিত। দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের (ডি ভি সি) এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি তৈরি হয় ১৯৫৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। কিন্তু ক্রমেই প্রাকৃতিক শোভা বর্ধিত মাইথন একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। প্রত্যেক বছর কয়েক লক্ষ পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। রাজ্যের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমান করেছে মাইথন।

১।

 

 

 

 

 

 

 

অফিসে কাজের চাপ অথবা ব্যস্ত-সমস্ত শহরের দূষণ কোলাহল থেকে রেহাই পেতে কয়েকটা দিন মাইথনে সময় কাটানোর মজাই আলাদা। এখানে বেড়াতে আসার সময় শুরু হয় সেপ্টেম্বর থেকে। চলে মার্চ মাস পর্যন্ত। তবে বর্ষাকালেও মাইথনের আলাদা রূপ খুলে যায়। সবুজ বনানীতে ঝমঝম বৃষ্টির ধারাপাত এক অন্য অভিজ্ঞতা এনে দেয়। বর্ষার কালো মেঘ ঢেকে দেয় পাহাড়ের চূড়া। স্ফীত হয় নদীর বুক। এই বর্ষাতেই জলাধারের জল ছাড়া হয়। জল ছাড়া দেখার জন্য প্রতিদিন এখানে কয়েক হাজার মানুষ ভিড় করেন। মনোরঞ্জনের তিনটি উপাদানই এখানে মজুত রয়েছে। পাহাড়ের উচ্চ শিখরে যারা সময় কাটাতে পছন্দ করেন তাদের জন্য উচু পাহাড়ের মাথায় বনবাংলো আছে। যারা দিনের আলোতেও গাছগাছালির থকথকে অন্ধকার ভালবাসেন অথবা আধার রাতে জোনাক আলোয় ঝিঝি পোকার ডাক শুনে রোমািঞ্চত হতে চান তাদের জন্য গহন অরণ্যে বনবাংলোর ব্যবস্থা আছে। আবার তিরতিরে হাওয়ার দোলায় যারা বহতা নদীর পাড়ে একাকী সঙ্গোপনে মনের কথা বলতে চান, তাদের জন্য বাথানবাড়ির কুল হারানো নদীর পাড়ও আছে।

মাইথন জলাধারটিও দেখার মতো। এর দৈর্ঘ্য সাড়ে পাচ কিলোমিটার। জলাধারের পরিধি ১৬০ বর্গমিটার। নদীর তলদেশ থেকে জলাধারের উচ্চতা ৫০০ ফুট। প্রায় ৮০০ মিটার এলাকার ওপর নির্মিত হয়েছে কংক্রিটের বাধ। ১১ টি লক গেট আছে। জল যখন নদীর বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন এই লকগেট খুলে বাধের জল ছাড়া হয়। এই বাধের পাশে বিশাল উচু এক পাহাড়ের কোলে বানানো হয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। জলাধারের ঠিক পাশেই রয়েছে হরিণ বন। ডি ভি সি কর্তৃপক্ষ এখানে হরিণ প্রজনন কেন্দ্র বানিয়েছেন। মুক্ত পরিবেশে হরিণ চরে বেড়াতে দেখা যায়। এখানে নদীগর্ভে একাধিক দ্বীপ আছে। পর্যটকদের এই দ্বীপগুলিতে বেড়ানোর সুযোগও আছে। নৌকো বা স্পিড বোটে চেপে এই সব দ্বীপে যাওয়া যায়। সারা দিন থেকে রান্না-খাওয়া করে পিকনিকের মেজাজে কাটানো যায়। মাইথনকে কেন্দ্র করে পাশের দুটি অঞ্চল সীদাবাড়ি ও বাথানবাড়িতে মানুষজন বেড়াতে যান। সীদাবাড়ি এলাকায় রয়েছে জঙ্গল এবং পর্বতমালা। ফিসফাস আওয়াজও এখানে পাহাড়ের গায়ে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে। এই জায়গা আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে মনোরম একটি পার্ক বানিয়েছেন ডি ভি সি কর্তৃপক্ষ। গোটা একটা দিন কাটানোর জন্য সীদাবাড়ি দারুণ। পর্যটকরা কেউ খাবার নিয়ে আসেন, কেউ আবার রান্না করেও খান। রান্নার সামগ্রী জোগাড় করে দেন পাশ্বর্বর্তী আদিবাসী গ্রামের বাসিন্দারা।

২।

 

 

 

 

 

সীদাবাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে এগিয়ে গেলে দেখা পাওয়া যায় বাথানবাড়ির। এখানে পাহাড়ের ঁছিটেফোটা মেলে না। কয়েকটা উচু টিলা এবং বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে থাকা শাল-সেগুন-পলাশের বন। মন ভরিয়ে দেবে কূল হারানো নদী। ঠিক যেন সমুদ্র। চার দিকে চিকচিকে নুড়ি বিছানো মাটিতে ঝিলিক দেয় প্রকৃতির আলো। তিরতির করে বয়ে যাওয়া হাওয়ায় নদীর ঢেউ ওঠে তিন থেকে চার ফুট। মন চাইলে নদীতে স্নানও করা যায়। মাইথনের অসম্ভব সুন্দর দৃশ্যাবলির মাঝে নৌকো-বিহারের আনন্দই আলাদা! সুসজ্জিত নৌকো বানিয়ে অথবা স্পিড-বোট চালিয়ে এই পেশায় যুক্ত হয়েছেন প্রচুর মানুষ। সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক শোভায় সুসজ্জিত মাইথন নিরিবিলিতে সময় কাটানোর এক আদর্শ স্থান।

যাতায়াত

– কলকাতা থেকে ট্রেনে এলে আসানসোল অথবা বরাকর স্টেশনে নামতে হবে। আসানসোলে নামলে, ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে ভাড়া গাড়িতে মাইথন আসতে ৫০০ টাকা লাগবে। বরাকর স্টেশনে নামলে খরচ হবে ৩০০ টাকা।
– কলকাতা থেকে বাসে এলে আসানসোল নেমে ভাড়া-গাড়ি ধরে আসতে হবে। রুটের বাস আছে তবে পর্যােপ্তর তুলনায় অনেক কম। সব সময় মেলে না।
– কলকাতা থেকে সরাসরি গাড়িতে এলে দুর্গাপুর এক্সেপ্রসওয়ে ধরে ধানবাদের দিকে আসতে হবে। এই রাস্তার নাম ২ নম্বর জাতীয় সড়ক। সোজা চলে আসতে হবে ডুবুরডিহি চেকপোস্ট। এখানে এসে ডান দিকের রাস্তা ধরে মাইথন। ডুবুরডিহি চেকপোস্ট থেকে মাইথন মাত্র সাত কিলোমিটার।

৩। 

 

 

 

 

 

আস্তানা

মাইথনে একাধিক হোটেল এবং রিসর্ট আছে।
মজুমদার নিবাস (ডি ভি সি কর্তৃপক্ষ)
নন্‌ এসি ডবল বেডের ভাড়া ১৮০ টাকা। চারটি সুসজ্জিত স্যুইট আছে ভাড়া বিভিন্ন রকমের।
ফোনে বুক করা যায়- নম্বর ০৬৫৪০-২৫২৪৬৫।
শান্তি লজ (পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তত্ত্বাবধানে)
ভাড়া: নন্‌ এসি ডবল বেড ৪০০ টাকার মধ্যে। এসি ডবল বেড ৭০০ টাকার মধ্যে।
ফোন নম্বর- ০৩৪১-২৫২৩৭৩৫।
পাহাড়ের ওপর একটি বনবাংলো আছে
চারটি ডবল বেড ঘর আছে। ভাড়া ১২০০ টাকার মধ্যে প্রতিটি।
ফোন নম্বর- ০৩৪৩-২৫৩৭২২৯।
বেসরকারি হোটেলে এসে বুকিং করা যায়
ডবল বেড নন্‌ এসি ৪০০ টাকার মধ্যে। ডবল বেড এসি ৭০০ টাকার মধ্যে।

আশেপাশে

শুধুমাত্র নৈসর্গিক শোভা নয়, মাইথনে ঢোকার মুখেই পড়বে ঐতিহাসিক কল্যাণেশ্বরী মন্দির। পর্যটক এবং এলাকার মানুষজনের কাছে এই মন্দিরের ধমর্য়ী গুরুত্বও আছে। কবে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কারা এই মন্দির বানিয়েছেন– তার কোনও প্রামাণ্য দলিল সরকারি ভাবে প্রকাশিত হয়নি। কথিত, সেন রাজাদের আমলে এই মন্দির বানানো হয়েছিল। মন্দিরকে ঘিরে অনেক লোকগাথা প্রচলিত আছে। মন্দিরকে সামনে রেখে এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্রও গড়ে উঠেছে। একবেলা বেড়ানোর জন্য এই কল্যাণেশ্বেরী মন্দির পর্যটকদের খুবই পছেন্দর। প্রতিদিন কয়েক হাজার পর্যটক এবং ধর্মপ্রাণ মানুষ এখানে পুজো দিতে আসেন। মঙ্গল ও শনিবার ভিড় খুব বেশি হয়। বাইরের পর্যটকরা মাইথনে বেড়াতে এলে অন্তত একবেলার জন্য এই মন্দির দর্শন করতে আসেন। কল্যাণেশ্বরী মন্দিরে যেতে হলে চুক্তিতে অটোরিকশা বা গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায় মাইথন বাধের সামনের স্ট্যাণ্ড থেকে। শুধু এক পিঠের যাত্রাও করা যায়। ফেরার পথে মন্দিরের সামনের স্ট্যাণ্ড থেকে ফিরতি পথের শাট্‌ল গাড়ি পাওয়া যায়।

গুলমা (উত্তরবঙ্গ)

গুলমা (উত্তরবঙ্গ)

দূর থেকে মনে হবে পিকচার পোস্টকার্ড। নীল পাহাড়, সবুজ বন, সোনালি ধান খেত। এখানে ওখানে টং ঘর। পালা করে লোক থাকে হাতি তাড়ানোর জন্য। এই হল গুলমার জঙ্গলের পরিচয় যেখানে হরেক পাখির মেলা— ধনেশ, ময়না, টিয়া, ফিঙে, বুলবুলি, দোয়েল।

১। 

 

 

 

 

 

গুলমা স্টেশনের বা দিকের আলপথ ধরে গুটি গুটি হেঁটে গেলে পুণ্ডিং বিট অফিস। পুণ্ডিং থেকে খয়রানি বনবিস্ত হয়ে ঘন বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া যায় গোলাঘাট রেঞ্জ অফিস। দূরত্ব ৪ কিমি। এই গোলাঘাটে ছিল অতীতের সুকনা লেক। গোলাঘাট থেকে লাটপাঞ্চার ১০ কিলোমিটার। প্রায়শই হাতির হানায় বনবিস্তর লোকজনেরা তটস্থ থাকেন।

২।

 

 

 

 

 

 

 

গুলমা থেকে গুলমাখোলা। এই স্টেশন বাড়ি কয়েক দশক আগে হাতির পালের সমবেত আক্রমণে পরিত্যক্ত। কেবিন ঘরটি সংস্কার করে মহানন্দা অভয়ারণ্যের নজর মিনার করা হয়েছে। একদা পর্যটন দফতর মাত্র ৭৫ টাকায় হাফ-ডে জঙ্গল সাফারি চালু করেছিল। কিন্তু যথেষ্ট জনিপ্রয় হওয়া সেত্ত্বও, কোনও কারণে সাফারি, এলিফ্যান্ট রাইডিং বন্ধ হয়ে গেছে।
সন্ধ্যায় ঝিকিমিকি তারার আলো বা জ্যোৎস্নায় প্ল্যাটফর্মে বসে পাখি, প্যাচার ডাক শুনতে শুনতে ট্রেন ধরে শিলিগুড়ি।

৩। 

 

 

 

 

 

অনুরোধ একটাই শুকনো খাবার, চা এবং ফ্লাস্ক, জলের বোতল, দূরবীন, পাখি চেনার বই, ক্যামেরা অবশ্যই সঙ্গে থাকা চাই।

যাতায়াত

বাসে কিংবা ট্রেনে শিলিগুড়ি। সেখান থেকে সিটি অটো ধরে নর্মদাবাগান, দেবীডাঙা হয়ে সমরনগর অটো স্ট্যাণ্ড।
এই অটো স্ট্যাণ্ড গুলমা স্টেশন থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে।
–শিলিগুড়ি থেকে সিটি অটোয় চম্পাসারির মিলন মোড়। সেখান থেকে হেঁটেও যাওয়া যায়।
–শিলিগুড়ি থেকে সোজা গাড়ি ভাড়া করেও যাওয়া যায়।

আস্তানা

– থাকতে হবে শিলিগুড়িতেই, যেখানে রয়েছে প্রচুর হোটেল, অতিথি নিবাস, পুরসভার অতিথিশালা
হেল্প ট্যুরিজম,
হিলকার্ট রোড (স্ট্যাণ্ডার্ড চাটার্ড ব্যাঙ্কের কাছে),
শিলিগুড়ি,
ফোন: ০৩৫৩-২৪৩৩৬৮৩ এবং ০৩৫৩-২৫৩৫৮৯৩।

মাথাপিছু আনুমানিক খরচ—শিলিগুড়িতে থাকলে মাথাপিছু দৈনিক অনুমানিক খরচ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। থাকা-খাওয়া মিলিয়ে।

সুকনা বনবাংলো-র বুকিং করতে পারলে ঘোরাটা উপভোগ্য হবে।
ডিএফও,
দার্জিলিং বনবিভাগ,
দার্জিলিং।
মাথাপিছু আনুমানিক খরচ— সুকনা বনবাংলোয় থাকলে দৈনিক গড়ে প্রায় দেড় হাজার টাকা। থাকা-খাওয়া মিলিয়ে।

আশেপাশে

মহানন্দা অভয়ারণ্যের সুকনা রেঞ্জের অন্যতম বিট পুণ্ডিং। পুণ্ডিং থেকে বনপথে রংটং, সিপাইধুরা, নরবুং, কান্দুং। একটি পথ চকলুং, চমকডাঙি হয়ে আদলপুরের দিকে যায়। নির্জন সরুপথ বনতুলসী, শাল, সেগুনের শুকনো পাতায় ছাওয়া।
গুলমার কাছেই কড়াইবাড়ি, নদী, অরণ্য।

 

 

হাতিপোতা (উত্তরবঙ্গ)

হাতিপোতা (উত্তরবঙ্গ) 

বক্সা ব্যাঘ্র প্রকেল্পর (পূর্ব) হাতিপোতার শেবেয়ার বনবাংলো।
পর্দা সরালেই জানালার সামনে সবুজ পাহাড়। ছবির মতো চা বাগান। একটু দূরেই নদী। এক অসাধারণ কোলাজ! সারাক্ষণ পাখির কলতান। যত দূরে চোখ যাবে শুধুই সবুজ। এমন একটি মনোরম জঙ্গল ঘেরা এলাকায় বনবাংলো তৈরি করেছে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প (পূর্ব)।

১।

 

 

 

 

 

 

২০০৭-এর মাঝামাঝি চালু হওয়া এই বনবাংলোর নামকরণ হয়েছে অডওয়ার্ড ওসওয়াল্ড শেবেয়ার সাহেবের নামে। যিনি ১৯১১ সালে ছিলেন জলপাইগুড়ি ডিভিশনের ডি এফ ও। জলদাপাড়া জঙ্গলের উন্নয়নের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অপরিসীম মনে করেন পরিবেশেপ্রমীরা।

যারা নির্জনতা চুটিয়ে উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য হাতিপোতার ওই বনবাংলোটি আদর্শ।

বনবাংলো থেকে চা বাগানের বাংলোর দিকে যাওয়ার রাস্তা নিঝুম। পথেই হাতিপোতা বাজার। রোববার হাতিপোতায় হাট বসে। হাটের ভিড়ে গরম ভাজাভুজির খোজ করতে পারেন।

২। 

 

 

 

 

 

 

যাতায়াত

হাতিপোতার বনবাংলোয় পৌছনো সহজ ব্যাপার। আলিপুরদুয়ার থেকে ঘন ঘন বাস, জিপ সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি পাওয়া যায়। সলসলা বাড়ি, শামুকতলা ধওলাঝোরা হয়ে দু’ঘণ্টায় পৌছে যায়। নামতে হয় আমতলায়। সবুজ চা বাগান ছুয়ে পিচ বাধানো রাস্তা ধরে একটু হাটা পথ। চিংড়িখোলা পার হলেই হাতিপোতা ফরেস্ট রেঞ্জ অফিস। একেবারে শেষ প্রান্তে সেবেয়ার বনবাংলো।
শিলিগুড়ি থেকে বাসে কামাখ্যাগুড়ি। সেখান থেকে জিপ বা ট্রেকার ভাড়া করা যায়।
এন জে পি ও শিলিগুড়ি থেকে সরাসরি গাড়ি ভাড়া নিয়েও যাওয়া যায়।

আস্তানা

শেবেয়ার বনবাংলো-য় তিনটে দুই শয্যার ঘর রয়েছে। রান্নাবান্নার লোক পাওয়া যায় হাতের কাছেই। যোগাযোগ
ফিল্ড ডিরেক্টর, বক্সা টাইগার রিজার্ভ (ইস্ট),
আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি।
ফোন ০৩৫৬৪-২৫৫০০৪।
মাথাপিছু আনুমানিক খরচ দৈনিক প্রায় ২০০০ হাজার টাকা

আশেপাশে

হাতিপোতার বাংলো থেকে অনায়াসেই যাওয়া যায়
ফাসখাওয়া, ভুটানঘাট, দক্ষিণ জয়ন্তী বিটের পানবাড়িতে
ভুটিয়াবিস্ত হয়ে জয়ন্তী,
কার্তিকা হয়ে রায়ডাক, ছিপড়া, নারারথলি, রসিক বিল অবধি ঘুরে আসা যায়
হাতে একটু বেশি সময় থাকলে ময়নাবাড়ি, তুরতুরি হয়ে নদী পেরিয়ে ধূমপাড়া, সঙ্কোশ, কুমারগ্রামদুয়ার অবধিও যাওয়া যায়

 

উত্তরবঙ্গ ভ্রমন

উত্তরবঙ্গ  ভ্রমন 

যাতায়াত

গ্যাংটক যেতে হলে শিলিগুড়ির বাস স্ট্যাণ্ড থেকে বাস ও জিপ পাওয়া যায়। এগুলি ছাড়ে তেনিজং নোরগে বাস স্ট্যাণ্ড থেকে। সকাল ৬:৩০টা ৭টা থেকেই বাস পাওয়া যায়। জিপগুলি মহানন্দা ব্রিজ থেকে যাত্রী ভর্তি হলেই ছাড়ে।
বাস বুকিং করতে: শিলিগুড়ি (০৩৫৩) ৪২১৪৯৬ / ৪৩২৭৫১
গ্যাংটক: (০৩৫৯২) ২২২০১৬

দমদম বিমানবন্দর থেকে উড়ানপথে বাগডোগরা। এখান থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে সটান কালিম্পং বা পেদং যাওয়া যায়। হাওড়া ও শেয়ালদা স্টেশন থেক নিউ জলপাইগুড়ি অবধি প্রতিদিন প্রচুর ট্রেন চলে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে রিক্সা অথবা অটোয় শিলিগুড়ির তেনিজং নোরগে বাস টার্মিনাস কিংবা মিত্তল বাস স্ট্যাণ্ড। কালিম্পংয়ের সরকারি ও বেসরকারি বাস ছাড়ে প্রায় প্রতি ঘন্টায়। মিত্তল স্ট্যাণ্ড থেকে পাওয়া যাবে শাট্‌ল সুমো বা জিপ। কালিম্পং থেকে পেদং

যাওয়ার শাট্‌ল গাড়ি পাওয়া যাবে বাস স্ট্যাণ্ড থেকে। গাড়ি ভরলে তবেই ছাড়ে। এখান থেকে পুরো গাড়ি ভাড়া নিয়েও যাওয়া যেতে পারে সোজা পেদং।

আবহাওয়া

সিকিম ও সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ি এলাকায় বেড়াবার আদর্শ সময় মার্চ থেকে অেক্টাবর মাস। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস অবধি ঠাণ্ডা বেশি। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস বর্ষায় পাহাড়ি রাস্তায় ধস নামার ফলে রাস্তা মাঝেমধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। তাই এই সময়টা এড়িয়ে যাওয়াই উচিত হবে। গরমে তাপমাত্রা দিনের বেলা ১৫ ডিগ্রির উপরে ওঠে না। শীতে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচেও।

থাকা
গ্যাংটক ও কালিম্পংয়ে বেসরকারি হোটেল আছে বেশ কয়েকটা। এদের বুকিং কলকাতার কিছু ভ্রমণ সংস্থা করে থাকেন। না হলেও বিভিন্ন মানের হোটেল গন্তব্যে পৌছে অনায়াশে ঠিক করে নিতে পারবেন।

পেদংয়ের কয়েকটি বেসরকারি হোটেল:

পেদং হলিডে রিসর্ট
রাই নিবাস
পোস্ট অফিস: পেদং
জেলা: দার্জিলিং
ফোন: (০৩৫৫২) ২৮১৫৩৫
মোবাইল: ৯৯৩২৫ ১৬১২৫

দ্য সিল্করুট রিট্রিট
২১ মাইল
জেলা: দার্জিলিং
পেদং: ৭৩৪৩১১
ফোন: (০৩৫৫২) ২৮১৩২৭, ২৮১৫৪২
মোবাইল: ০৯৯৩২ ৭৭৫৫৯৫

ঋষি রিভার রিসর্ট
সেবাস্টিয়ান প্রধান
ঋষি
পূর্ব সিকিম
মোবাইল: ০৯৯৩২৭ ৪৪৪০৭,
০৯৯৩২৬ ৮০১৭০

মেলা-পার্বণ
সিকিম ও দার্জিলিং পাহাড়ে বৌদ্ধ গোম্ফায় বছরে প্রধানত দুটি নৃত্যোৎসব হয়। তিব্বতি দিনপিঞ্জকার দ্বাদশ মাসে, অর্থাৎ ইংরেজি ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস নাগাদ অনুষ্ঠিত হয় মহাকালের উদ্দেশ্যে লামা নৃত্য। আর এই পিঞ্জকার দ্বিতীয় মাসে দেখা যায় বিখ্যাত ছাম নাচ যা মহাগুরু পদ্মসম্ভবের প্রতি শ্রদ্ধাবশত অনুষ্ঠিত হয়।
পেদংয়ে প্রতি বছর বসে ড্যামস্যাং মেলা। রাজা গেবো আচিয়কের জন্মতিথি পালন করতে এই মেলা শুরু হয়।
দীপাবলিতে এই অঞ্চলে পালিত হয় দেউসি-ভাইলো উৎসব। প্রথম দুই দিন মেয়েরা ও পরের দুই দিন ছেলের দল সুর করে পাচালি রীতির আলেখ্যে রামায়ণের গান শোনায় বাড়ি বাড়ি। বদলে তারা পায় গৃহেস্থর দানসামগ্রী।
মে মাসে ডক্টর গ্রাহাম্‌স হোমে প্রতি বছর পালিত হয় মে-ফেয়ার। স্কুলের ছাত্রছাত্রী ছাড়াও সাধারণের প্রবেশ অবাধ এই মেলায়। বাচ্চাদের তৈরি হরেক জিনিসের প্রদর্শনী ছাড়াও মেলে কুটির শিল্পজাত বিভিন্ন দরকারি সামগ্রী।

স্বর্ণালী অতীত রোমন্থনে ধূসর ভবিষ্যত

স্বর্ণালী অতীত রোমন্থনে ধূসর ভবিষ্যত

পর্যটন মানচিত্রে নবাগত পেদংয়ের আছে তাৎপর্যপূর্ণ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। পেদং হয়ে রেনক, কুপুপ, জেলেপ লা ও নাথু লা গিরিপথ ধরে গেছে তিব্বতে প্রবেশের পথ, ইতিহাস-প্রসিদ্ধ ‘সিল্ক রুট’। এই পথ বেয়ে যুগে যুগে পণ্য নিয়ে প্রাচীন ভারতের বাণিজ্যকেন্দ্রে পৌছত ভিনদেশি বণিকের দল। বেড়ানোর অবকাশে পেদংয়ে এসে ভারত তথা প্রতীচ্যের নানা চাঞ্চল্যকর অধ্যায়ের সাক্ষী সেই পথের সন্ধান পেয়েছেন লেখক।

১।  

হাল আমলের পর্যটন মানচিত্রে সাম্প্রতিক সংযোজন হলেও পেদংয়ের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। এই জনপদের অবস্থান সিকিম তথা তিব্বতের খুব কাছে বলেই সুদূর অতীত থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে তার গুরুত্ব অপরিসীম। ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি থেকেই পেদং ইতিহাস চর্চিত ‘সিল্ক রুট’-এর অন্যতম ঘাটি। চিন থেকে তিব্বতের লাসা হয়ে জেলেপ লা গিরিপথ অতিক্রম করে কুপুপ, রেনক, পেদং, কালিম্পংয়ের ওপর দিয়ে সেই ঐতিহাসিক পথ পৌছে যেত পাতলিপুত্র নগরী এবং ভারতীয় অন্যান্য বাণিজ্যকেন্দ্রে। এই বাণিজ্য পথে প্রখ্যাত ‘মিউল ট্রেন’ বা মাল বোঝাই খচ্চরের সারি পৌছত ভারতে। রেশম দিয়ে আরম্ভ হলেও ক্রমে অন্যান্য সামগ্রিতে সমৃদ্ধ হয়েছে সিল্ক রুটের বর্ণাঢ্য পসরা। নানান বাণিজ্যিক দ্রব্যের মধ্যে পশমই অবশ্য কালক্রমে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা হয়ে উঠেছে। পথশ্রান্ত বণিকের দল তাদের আশ্রয় খুজে পেয়েছে পেদংয়ের ধুপিবন ঘেরা শান্ত পিল্লতে। স্থানীয় মানুষ আজও রোমন্থন করেন সেই স্মৃতি। আঙুল তুলে দেখিয়ে দেন, ‘ওইখানে ছিল খচ্চরের আস্তাবল’, আর ‘ওই পাহাড়ের খাজে ছিল ইয়াকের গোয়াল।’

২।

বণিকেরা অধিকাংশই তিব্বতি ও ভুটিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। ইয়াকের দুধ থেকে মাংস, সবই জনিপ্রয় ছিল তাদের রসনায়। বর্তমানে ইয়াক বিরল। কিন্তু ভিনদেশিদের চারিয়ে যাওয়া অভ্যেস রয়ে গেছে। তাই হয়তো এই এলাকার মানুষের দৈনিক খাদ্যাভাসে মোষের মাংসের জনিপ্রয়তা লক্ষণীয়। পেদংয়ের ঘরে ঘরে ‘বাফ’ অর্থাৎ মোষের মাংসের রকমারি পদ রাধা হয় প্রায় রোজই।

১৮৬৪ সালে ভুটানিদের যুদ্ধে পরাস্ত করে পেদং-সহ দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে ব্রিটিশ সরকার। সিকিমের দখল আগেই এসেছিল ইংরেজদের হাতে। এ বার দুই পাহাড়ি এলাকা জুড়ে তৈরি হল বিস্তৃর্ণ পার্বত্য রাজ্য যার অধীশ্বর ব্রিটিশ সরকার। নতুন রাজ্যে নেপালের অধিবাসীদের অনুপ্রবেশের ফলে তাদের সঙ্গে অঞ্চলের আদিবাসী লেপচা, ভুটিয়া ইত্যাদি উপজাতির মিশেল ঘটল। ফলস্বরূপ তৈরি হল এক সংকর পার্বত্য জাতি। জন্ম নিল অভিনব পার্বত্য সমাজ এবং তার অনন্য কৃষ্টি আর পরম্পরা। এক একটি উপজাতির আবার নানান বিভাজন। এই ভাবেই গুরুং, তামাং, রাই, প্রধান ইত্যাদি বৃহৎ গোষ্ঠী বা পরিবারে সৃষ্টি হয়। মূলত একই ট্রাডিশনের ধারক বা বাহক হওয়া সেত্ত্বও প্রতিটি গোষ্ঠী তাদের আচার ব্যবহারে স্বতন্ত্র।

এই পার্বত্য অঞ্চলে বৌদ্ধধর্ম প্রথম প্রচার করেন গুরু পদ্মসম্ভব, যিনি সুপ্রাচীন সিল্ক রুট ধরেই তিব্বত পৌছেছিলেন। বুদ্ধের বাণী হৃদয়ঙ্গম করে প্রচুর মানুষ যেমন ধর্মান্তরিত হলেন, অন্য দিকে সনাতন হিন্দুধর্ম আকড়ে পড়ে থাকলেন জনতার এক বিরাট অংশ। তৎকালীন ভারতবর্ষের দিকে দিকে বৌদ্ধ-হিন্দু সংঘাত আকছার ঘটলেও আশ্চর্য ভাবে এই এলাকায় তার কোনও প্রভাব পড়েনি। ফলস্বরূপ কেবলমাত্র শান্তি বজায়ই নয়, এক অনন্য মিশ্রধমর্য়ী পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে হিমালয়ে এই অংশ।

৩। 

পেদংয়ে এক দিকে যেমন তিন খানা বৌদ্ধ মন্যাষ্ট্রি দেখা যায়, তেমনই কালী, শিব, বজরঙ্গবলীর মতো হিন্দু দেবদেবীর আরাধনা চলে বছরভর। হিন্দু-বৌদ্ধ বিয়ে যেমন বিরল নয়, পাশাপাশি গ্রামের কারও মৃত্যু হলে শবমিছিলে ধর্মমতনির্বিশেষে প্রতি বাড়ির একজন সদস্য যোগ দেন। নিজের চোখে দেখেছি, পেদংয়ে আনুষ্ঠানিক সাড়ম্বর শান্তি সেম্মলন, যেখানে হিন্দুমতে যেজ্ঞর আয়োজনের পাশাপাশি মাখনের প্রদীপে বোধিসেত্ত্বর প্রার্থনায় মগ্ন হয়েছেন আপামর পাহাড়ি জনতা। ভূত, প্রেত, অপদেবতার সংস্কারে বহুলাংশে আবদ্ধ সরল স্থানীয়রা। বিপদেআপদে মানত চড়ান মহাকালের চরণে। আরিধার হ্রদ সংলগ্ন শিবমন্দিরে পুজো পান বজ্রযান বৌদ্ধতেন্ত্র উল্লেখিত তিব্বতি শিব। পেদংয়ের সাংচেন দোরজি গুম্ফায় ফি-বছর অনুষ্ঠিত হয় লামাদের ‘ছাম নৃত্য’। ধর্মমতের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেও এই পবিত্র বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান দেখতে ভিড় জমান দূরদূরান্তের পাহাড়িয়ারা। দীপাবলিতে ‘দেউসি-ভাইলো’ গানের ছেন্দ কোমর দোলান বৌদ্ধ ও হিন্দু, দুই সম্প্রদায়ের মানুষই।

৪।

 

 

 

 

 

 

 

 

খ্রিস্টান যাজকদের হাত ধরে এক দিকে যেমন শিক্ষার আলো প্রবেশ করেছে পেদং ও সংলগ্ন পাহাড়ি অঞ্চলে, তেমনই খেত খামারের উন্নতি সাধনেও তাদের অগ্রণী ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। পেদংয়ের রাজা গেবো আচিয়ক তঁার দুর্গ লাগোয়া বন সাফ করে চা বাগান তৈরি করেন। এই বাগানের পত্তন, শ্রীবৃদ্ধি ও দেখভালে তাকে অনুপ্রাণিত করেন খ্রিস্টান মিশনারিরা। ক্রমে এই বাগানের চায়ের সৌরভ ছড়িয়ে পড়েছিল বিদেশে। তাদের উৎসাহেই পেদংয়ে গড়ে ওঠে উন্নতমানের ডেয়ারি। গরু, মোষ ও ইয়াকের দুধের চিজ সেখানে তৈরি হত। কালিম্পং জনিপ্রয়তা পাবার অনেক আগেই। কিন্তু পরবর্তীকালে নানান অব্যবস্থা ও গাফিলতির ফলে তা স্থানান্তরিত হয় কালিম্পংয়ে। একই অবস্থা হয় শুয়োরের খামারের। ফরাসি যাজকদের সাহায্যে পেদংয়ের বাজার এলাকা ছাড়িয়ে গড়ে উঠেছিল পিগারি। বেশ কয়েক বছর সাফল্যের সঙ্গে ব্যবসা করলেও বর্তমানে এই খামারের অিস্তত্ব বিপন্ন। অভিযোগ সেই সাংগঠনিক অবহেলার।

তবে আশায় দিন গুনছেন পেদংয়ের মানুষ। ভারত-চিন আন্তর্জাতিক সুসম্পর্কের উন্নতির দিকে তাকিয়ে আছেন তারা। এর জেরেই আবার চালু হতে পারে একদা বন্ধ হয়ে যাওয়া সিল্ক রুট। সারি সারি খচ্চরের বদলে হয়তো মুদুম খোলা পেরিয়ে এগিয়ে আসবে আধুনিক পণ্যে ঠাসা ভিনদেশি ট্রাক কেন্টনারের সুশৃঙ্খল শ্রেণি। সরাইখানায় রাতের আশ্রয়ের খোজে কড়া নাড়বেন তিব্বতি ট্রাক ড্রাইভার। পেদং ফেরত পাবে লক্ষ্মীর ভাড়ারের হারিয়ে যাওয়া চাবিকাঠি।

ধুপি গাছের খাসতালুকে

ধুপি গাছের খাসতালুকে

 

‘পেডং’ না ‘পেদং’- নাম নিয়ে বিভ্রান্তিতে সময় নষ্ট না করে নতুন নাম শোনা ছোট্ট পাহাড়ি জনপদের অজানা রূপে বিভোর হতেই হয়। ঐতিহাসিক আমল থেকেই বণিকদলের আনাগোনায় সমৃদ্ধ হয়েছে যে গ্রাম, তারই আধুনিক অথচ আটপৌরে রূপ দেখে সেম্মাহিত হয়েছেন লেখক। তাঁর কলমে পেদং-এর মনকাড়া ছবি।

কালিম্পং বাস স্ট্যাণ্ডে পৌছতেই কানে এল ‘‘পেদং, পেদং’’ হাক। হ্যা, জায়গার আদত নাম ‘পেডং’ নয়, ‘পেদং’। ভুটিয়া ভাষায় পেদং মানে সুগিন্ধ গাছের জায়গা। সুগিন্ধ, অর্থাৎ ধুপি গাছ। জুনিপার গোত্রের এই গাছ হিমালয়ের এই অঞ্চলে ৪০০০ ফুটের ওপরে দেখা যায়। যেমন সুন্দর দেখতে তেমনই তার গুণ। ধুপি কাঠে কখনও উই বা ঘূণ ধরে না। এর পাতা শুকিয়ে জ্বাললে অপূর্ব সুগন্ধ বের হয়। ধূপের মতো গন্ধ বলেই নাম ধুপি। স্থানীয়দের বিশ্বাসে, অতি পবিত্র এই গাছ আকৃষ্ট করে স্বর্গবাসী দেবতাদেরও।

কালিম্পং থেকে পেদং ২১ কিলোমিটার। কালিম্পংয়ের ঘন বসতি ছাড়াতেই পাহাড় হাট করে খুলে দিল তার অপরূপ অন্দরমহলের দরজা। গ্রীেষ্মর শেষে বর্ষারেম্ভর প্রস্তুতির চিহ্ন আকাশ জুড়ে। মেঘের পর্দার ফাঁক দিয়ে উকি দিচ্ছে ম্লান সূর্য। পাকদিণ্ড পথের এক পাশে গভীর খাদ আর অন্য পাশে শ্যাওলা, ফার্ন আর রকমারি রংবেরঙের অচেনা ফুলে সাজানো পাহাড়ের ধাপ। কখনও পাহাড়ের বাকে কয়েক ঘরের এক ফেঁাটা গ্রাম। টিনের চালওয়ালা কাঠের বাড়ির জানালায় হালকা নেটের পর্দা আর এক চিলতে বারান্দায় ঠাসাঠাসি করা টবে ফুলের মেলা।

১।

শুনলাম, আর একটু চড়াই ভাঙলে দেখা মিলতে পারে নানা রঙের গুরাস-এর, মানে রডোডেনড্রন। ১৫ কিলোমিটার পাকদণ্ডি পথের শেষে ছোট শহর আলগারা। গাড়ি এখানে ১৫ মিনিট থামল। টুক করে নেমে এক চক্কর হেঁটে এলাম। বাজারে বিকোচ্ছে টাটকা ফল আর সবজি। মোষের মাংসের দোকানে বেশ ভিড়। শহুরে হাবভাব এখানে যথেষ্টই, আছে সাইবার কাফে, সি ডি লাইব্রেরি আর বৈদ্যুতিন জিনিসপত্রের দোকান। পেদং এখান থেকে আর ছয় কিলোমিটার। দু’ কিলোমিটার চড়াই ভেঙে গাড়ি উতরাই পথ ধরল। কুড়ি মিনিটেই পৌছলাম ৪৭০০ ফিট উচ্চতার পেদংয়ের বাজার সংলগ্ন ট্যাক্সি আড্ডায়।

২।

স্ট্যাণ্ডের পাশে ফুটবল মাঠ। স্কুল ইউনিফর্ম পরা ছেলের দল সেখানে বল পিটছে। মাঠের উেল্টা দিকে বিশাল স্কুলবাড়ির বারান্দায় হুটোপুটি করছে বাচ্চা ছেলেমেয়েরা। ক্রিশ্চান মিশনারিদের স্কুল সেন্ট জেভিয়ারের নামে। পাশেই আছে ক্যাথলিক গির্জা। অনেক বছর ধরেই এখানে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু কনভেন্ট। সেন্ট জেভিয়ার্স ছাড়াও আছে সেন্ট জর্জ, গ্রেস স্কুল এবং টেণ্ডার বাড্‌স, স্প্রিং বণ্ড, সানরাইজ, কিড্‌স ক্যাস্‌ল-এর মতো কয়েকটা প্রাইমারি স্কুলও।

৩।

হোটেলের পোশাকি নাম ‘পেদং হলিডে রিসর্ট’ হলেও ‘রাই নিবাস’ নামেই লোকে চেনে। পেদং বাজারের কাছে পাহাড়ের ঢালের ওপর দোতলা বাড়ির চার দিক ঘিরে বাগান। একটু অগোছালো সেই বাগানের রূপ যেন বেশি খুলেছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ফুলের মেলায়। ফলের গাছও আছে। পিচ, চেরি, আলুবোখরা এমনকী ছোট ছোট ষ্ট্রবেরির ঝোপও। গৃহস্বামী সপরিবার ওপরতলায় বাস করেন। একতলার পুরোটা জুড়ে অতিথিশালা। রিসেপশন কাউন্টারে রসিদপত্র বুঝে নিল যে ছেলেটি, তার নাম শ্রাবণ। সম্পর্কে রাই মশাইয়ের ভাইপো। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি অনার্স নিয়ে এম.এ. পড়ছে। তার সঙ্গী ভিকির পড়াশোনা বারো ক্লাস পর্যন্ত। দু’জনে ভারী দোিস্ত। হোটেলের ম্যানেজার- কাম- রাধুনি- কাম- ওয়েটার ভিকি থাকে বাজারের পাশেই। সে নাকি আঞ্চলিক সিনিয়র ফুটবল টিমের অধিনায়কও! যাই হোক, লাঞ্চে তার রাধা চিকেন কারির স্বাদ যে অমৃতসম তা স্বীকার করতেই হল।

৪।  

বিকেলে চললাম মন্যািষ্ট্র দেখতে। এই দিকে সর্বত্র বৌদ্ধ গোম্ফার ছড়াছড়ি। পেদং শহরে আছে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে সেনা ছাউনি। তার রাস্তা ধরে উঠতে হয় পাহাড়ের মাথায়, যেখানে কাঠ আর সিমেেন্টর তৈরি প্রাচীন গোম্ফা দাড়িয়ে। ১৮৩২ সালে তৈরি এই সিকিমি গোম্ফার উল্লেখ পাওয়া যায় ১৮৮২ সালে লেখা কালিম্পংয়ের তদানীন্তন ডেপুটি কালেক্টর সি. আর. ম্যারিনডিনের পেশ করা রিপোর্টে। বহরে ক্ষুদ্র হলেও গাম্ভীর্যে তুলনাহীন তার উপিস্থতি। অন্যান্য মন্যািষ্ট্রর তুলনায় পেদং গোম্ফার চাকচিক্য কম। এক তলার প্রার্থনাকক্ষের মেঝে আর সিলিং কাঠের, দেওয়াল কংক্রিটের। অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য লক্ষ করলাম— বিশাল মাপের বুদ্ধমূর্তি এখানে নেই। তার বদলে সারিবদ্ধ কাচের শো-কেসে রাখা তিন ফুটের বিভিন্ন মূর্তি। বোধিসত্ত্ব, অবলোকিতেশ্বর, গুরু পদ্মসম্ভব, অতীশ দীপঙ্কর ও বৌদ্ধ তারাকে চিনতে পারলাম। তাংখার ঝালরে মোড়া থামগুলো। ঘরের দুই পাশে টানা মাদুর পাতা, যার সামনে সার সার জলচৌকির ওপর তিব্বতি হরফে লেখা পুথি, মণিচক্র আর বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র। যেমন শিঙা, মৃদঙ্গ, ঝাঝর, ঢোল। প্রার্থনার সময় লামারা এই সব বাজনার সঙ্গতেই মেন্ত্রাচ্চারণ করেন। গোম্ফার ওপর তলায় ছোট ঘরে তিন ধাপ জুড়ে জ্বলছে মাখনের প্রদীপ। সেখানে বুদ্ধের নানান রূপের ধাতব মূর্তি সাজানো। ধূপের গেন্ধ হাওয়া ভারী হয়ে আছে। ভাব-গাম্ভীর্যে ভরপুর গোম্ফা দেখে আমরা চললাম বাজারের দিকে।

৫।

পেদং বাজারে ঢোকার মুখে ভিকির সঙ্গে দেখা। আমাদের রাতের খাবারের মালমশলা জোগাড় করতেই যে সে এসেছে তা এক কথায় জানাল। মোমোর অমোঘ হাতছানি না এড়াতে পেরে তিব্বতি রেেস্তারায় বসে পড়লাম। মোষের মাংস, স্থানীয় মানুষের ভাষায় ‘বাফ’-এর মোমো। সঙ্গে ধোয়া-ওঠা স্যুপ। আটটা মোমোর েপ্লটের দাম পনেরো টাকা। ছোট বাটিতে আছে টম্যাটো ও ডেল্লর ঝাল-টক আচার। অপূর্ব স্বাদ! নিমেষে ফাঁকা হয়ে গেল প্লেট।

হোটেলে ঢুকতে না ঢুকতেই হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি নামল। মুষলধারার ঘোলা পর্দায় ঢাকা পড়ে গেল সমস্ত চরাচর। কাচের জানলায় মুখ ঠেকিয়ে বাদলধারার তাণ্ডব দেখলাম অনেকক্ষণ। সঙ্গে বিদ্যুতের ঝলকানি আর তীব্র শেব্দ অশনিপাত। তবে আধ ঘন্টা জোরে বৃষ্টি হয়ে আচমকাই থেমে গেল। ঠাণ্ডা বাড়ল জাঁকিয়ে। ঝিঁঝির একটানা ডাক আর ক্ল্যাপিং বিট্‌লসের কটাকট সঙ্গতে অজােন্তই ঘুম এসে জড়িয়ে ধরল।

৬।

সকালে চায়ের ট্রে নিয়ে ভিকি যখন ঘুম ভাঙাল ঘড়িতে তখন সকাল সাড়ে ছ’টা। জানলার পর্দা সরাতেই ঘরে ঝলমলে রোদ ঘরে ঝাঁপিয়ে পড়ল। ব্রেকফাস্ট সেরে শ্রাবণের সঙ্গে আমরা রওনা দিলাম ড্যামস্যাং দুর্গের দিকে। মন্যাষ্ট্রির রাস্তা ডান হাতে রেখে, আরও ২ কিলোমিটার এগিয়ে ডান হাতে খাড়া পাহাড়। শীতে এই পাহাড়ে রক ক্লাইম্বিং শেখানো হয়। এইখানে গাড়ির রাস্তা ছেড়ে উঠে গেছে ড্যামস্যাং জং-এ যাওয়ার কাচা রাস্তা। ‘জং’ ভুটিয়া শব্দ, যার মানে দুর্গ। জানা গেল, ফোর হুইল ড্রাইভওয়ালা গাড়ি নিয়ে এই পথে দুর্গ যাওয়া যায়। তবে হেঁটে যাওয়ার আনন্দ বেশি। চার পাশের দৃশ্য চাখতে চাখতে যাওয়া যায়। এক কিলোমিটার হেঁটে চোখে পড়ল পাহাড় কেটে ইমারত তৈরির কাজ চলছে। বোর্ডিং হাউজ হবে। পর্যায়ক্রমে পাকা হবে রাস্তাও।

৭।

পথের দু’পাশে কোনও লোকালয় নেই। এ দিক ও দিক ছড়িয়ে আছে চিলৌনি আর ধুপি গাছের জটলা। আরও এক-দেড় কিলোমিটার পরে দেখতে পেলাম চা বাগান। যেত্নর অভাবে অবশ্য সে বাগানের অিস্তত্ব লোপ পেতে বসেছে। শ্রাবণ জানাল, এক সময় সুগিন্ধ লিকারের জন্য এই উদ্যানের চায়ের খ্যাতি ছিল। তখন বিদেশের বাজারে রপ্তানি হত এই চা। চা বাগানের মালিক ছিলেন রাজ পরিবার। কালেস্রাতে ভেসে গেছে রাজেত্বর গরিমা আর তার ছাপ পড়েছে চা বাগান পরিচর্যার ক্ষেত্রেও।



৮।






চা বাগান ছেড়ে ঢুকে পড়লাম পাইনের জঙ্গলে। সুপ্রাচীন মহাদ্রুম রক্ষীরা আগলে রেখেছে দুর্গের প্রবেশপথ। তাদের ঘন ডালপালার আস্তরণ ভেদ করে সূর্যের আলো মাটিতে পৌছয় না। স্যাতস্যাতে ভেজা ভেজা আবহে একটানা ঝিঁঝির কোরাস বেজে চলেছে।

কোথাও গাছের পাতা থেকে টুপটাপ খসে পড়ছে হিমের ফোটা নীচের পচা পাতার স্তূপে। পায়ের তলায় মখমলি ঘাসের ওপরে চলতে হচ্ছে খুব সাবধানে, কারণ সেখানে জোকের উপদ্রব। জঙ্গলের শেষে, পাহাড়ের মাথায় তার যাবতীয় ঐতিহাসিক নিঃসঙ্গতা নিয়ে দাড়িয়ে ড্যামস্যাং দুর্গ। সময় তার বলিষ্ঠতায় জরার প্রলেপ দিয়েছে।

চার পাশের ঘন জঙ্গলের ছায়া পড়ে জলের রং পান্না-সবুজ। সেই জলে ভেসে বেড়াচ্ছে রঙিন মাছের দল। হ্রদ ঘিরে সুন্দর বাধানো রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবার গোল চত্বর, মাথায় রঙিন ছাতা। লেকের জলে বোটিংয়ের ব্যবস্থাও আছে। লেকের পূর্ব পাড়ে টিলার মাথায় ছবির মতো রিসর্ট। পশ্চিম পাড়ে শিবমিন্দর। অধিষ্ঠিত বিগ্রহ তান্ত্রিক বৌদ্ধরূপী মহাদেব। উত্তর পাড়ে খাড়া টিলাকে বেড় দিয়ে উঠেছে সিঁড়ির ধাপ। টিলার ওপরে ছাতা লাগানো কয়েকটা ভিউ পয়েন্ট। সিঁড়ি ভাঙার ক্লান্তি দূর হয়ে যায় সেখানে বসে নীচের উপত্যকার মনোরম দৃশ্য দেখে। পাহাড়ের অন্য ঢালে ছড়িয়ে আছে আরিটার গ্রাম। ধাপচাষের ছোট খেত দেখলে মনে পড়ে অবনীন্দ্রনাথের ‘বুড়ো আংলা’য় বর্ণিত শতরঞ্জ খেলার ছকের উপমা। একটু তফাতে এক টুকরো জমির ওপর হেলিপ্যাড। শুনলাম, সেনাবাহিনীর কপ্টার মাঝেমধ্যে সেখানে নামে। ফুরফুরে ঠাণ্ডা হাওয়ায় একটু বসতেই কঁাপুনি ধরাল। ঢুকে পড়লাম লেকের পাড়ের তিব্বতি গুমটিতে। পর্ক, মোমো আর তোংবা দিয়ে জমে গেল বিকেলের জলখাবার।

Wednesday, 18 April 2012

কালিম্পং

 কালিম্পং

কালিম্পংয়ের খ্যাতি বহুকাল ধরে রোমান্টিকতায় আচ্ছন্ন করেছে আপামর বাঙালিকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে সত্যজিৎ রায়, এমন কী হাল আমলের গুণিজনেরাও ফিরে ফিরে গেছেন এই শৈলশহরে। আজকের রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে দাড়িয়ে কেমন আছে আমাদের শৈশব স্মৃতির ভ্রমণ প্রেয়সী? এই লেখায় সেই তালাশের সুলুক সন্ধান।



‘‘গোর্খাল্যাণ্ড, গোর্খাল্যাণ্ড!’’ পিশ্চমবঙ্গের পাহাড় অশান্ত হয়ে উঠেছে। আশির দশকের মাঝামাঝি ওঠা ঝড় বুঝি ফিরে এসেছে আবার! পুরনো রাজনৈতিক দলকে মুছে দিয়ে এসেছে নতুন গোষ্ঠী। এ-যাবৎ জনিপ্রয়তার শীর্ষে থাকা নেতা সিংহাসন ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন নব্য যুবা জননায়ককে। পৃথক রাজ্যের দাবিতে ফের সরব হয়েছেন স্থানীয় মানুষ। বাংলার শাসকদলের সঙ্গে হামেশাই বাধছে তাদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ। মে মাসের গোড়ায়, যখন ফতোয়া জারি হয়নি, যখন এ বিশ্বাস অটুট ছিল যে, আর যাই হোক, নিরীহ পর্যটকের ওপর কোনও ক্ষোভ নেই আেন্দালনকারীদের, যখন ভ্রমণ সংস্থাগুলোর কাউন্টারে ব্রাত্য হয়ে পড়েনি উত্তরবঙ্গের রূপসী দার্জিলিং, কালিম্পং, মিরিক, কার্শিয়াং, লাভা, লোলেগাও, রিশপের অগ্রিম বুকিং—তখন, কলকাতার ভ্যাপসা গরমে ঘামতে ঘামতে শিয়ালদহ স্টেশন ছেড়ে রাতের ট্রেনে রওনা দিলাম কালিম্পংয়ের উদ্দেশে।

সাত সকালে নিউ জলপাইগুড়ি জংশনে নেমে অটো ধরে শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস। তার পর সেবক রোড ধরে সুকনার জঙ্গল পেরিয়ে, করোনেশন িব্রজ টপকে তিস্তার হাত ধরে পাকদণ্ডি পথে ঘুরপাক খেতে খেতে তিন ঘন্টায় কালিম্পং। বাস থেকে নামতেই উদ্ভট ঝামেলার মুখোমুখি হতে হল। আমাদের হোটেল মূল শহরের খানিক বাইরে বলে ট্যাক্সি ভাড়া করতে গিয়ে নাকাল হলাম। আজ এখানে হাটবার। আমরা যে রাস্তা ধরে যাব তার বেশ কিছুটা জুড়ে দোকান বসেছে। তাই সেই পথে গাড়ি ঢুকবে না। কোনও গাড়ির চালক যেতে চাইছেন না। লটবহর নিয়ে হা করে দাড়িয়ে ভাবছি ট্রেন থেকে নেমেই ট্রেকিং শুরু করতে হবে কি না। পরিত্রাতা হয়ে এগিয়ে এলেন সোনম দোরজি, তার মারুতি ভ্যানে তুলে পৌছে দিলেন হোটেলে।



আমাদের হোটেল ঘিঞ্জি এলাকা ছেড়ে বেশ ফাকায়। বারান্দায় দাড়িয়ে সামনে তাকালে রাস্তার পরে গভীর খাদ, সেখানে অন্ধকার থমকে আছে। খাদ পেরিয়ে দৃষ্টি আটকে যায় দিগেন্ত খাড়া পাহাড়ের ঢেউয়ে। তাদের কালচে নীল শরীর মোড়া সবুজ আলোয়ানে আর মাথায় মেঘের পাগড়ি বাধা। নিশ্চল সেই তরঙ্গরাজির মাথায় ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘার উজ্জ্বল উপিস্থতি। আকাশের পিশ্চম প্রােন্ত মেঘের দল জটলা পাকাচ্ছে। তবে বর্ষা নামতে এখনও দেরি।

বিকেলে শহর ঘুরতে বেরোলাম। ব্যস্ত শহর কালিম্পংয়ের আষ্টেপৃষ্ঠে বাণিজ্যিক তকমা আটা। ঝা-চকচকে শো-রুম, হোটেল, রেস্তোরা, বাজার, ভ্রমণ সংস্থার ছড়াছড়ি। তবে ফাকফোকরে চোখ রাখলে নজরে পড়ে সাবেকি গ্রাম্য চেহারাটাও। সকালে দেখা হাট এখন ভাঙার মুখে। কী নেই সেখানে!

টাটকা ব্রকোলি, প্লাম, পিচ, সর্ষে শাক, ইয়াকের দুধ জমানো ছুরপি, শুটকি মাছ, শুয়োরের মাংসের আচার আর এ অঞ্চলের বিখ্যাত লঙ্কা ‘ডেল্ল খুরসানি’র পাশে জায়গা করে নিয়েছে রোজের চেনা উচ্ছে-বেগুন-পটল-মুলো। নেপাল সীমান্ত পার হয়ে আসা বিদেশি চপ্পল, ওয়াকম্যান ও সুগিন্ধ থরেথরে সাজানো কাঠের নড়বড়ে চৌকির ওপর। মাত্র আড়াইশো টাকায় হংকংয়ে তৈরি জগিদ্বখ্যাত ব্র্যাণ্ডের জুতো পেয়ে আমার সঙ্গীও লোভ সামলাতে পারলেন না!

রাস্তায় অফিস-ফেরত গাড়ির মিছিল ক্লক টাওয়ার ঘিরে যানজট তৈরি করেছে। নিরুপায় ট্র্যাফিক কনেস্টবল স্থানুবৎ দাড়িয়ে। গাড়ির চালক আর সওয়ারিদের বিরক্ত মুখচোখ, হর্নের প্যা-পো, পথচলতি মানুষের গজগজানি শুনে ফেলে আসা চিরপরিচিত নাগরিক জীবন মনে ভেসে উঠল। ছোটবেলায় শোনা এই শহরের কেক-পেষ্ট্রির সুখ্যাতি পরখ করতে ঢুকলাম বেকারির দোকানে। চকোলেট ক্রিম ঠাসা, চেরি ফলের মুকুট পরা পেল্লায় ক্রিমরোল মিলল মাত্র দশ টাকায়! কলা আর ষ্ট্রবেরির স্বাদওয়ালা খুদে পেষ্ট্রি মুখে দিতেই গলে গেল। উপরি পাওনা, ডেয়ারি কাউন্টারে রাখা কটেজ চিজ-এর সমাহার। আহা, তার স্বর্গীয় স্বাদ-গন্ধ ভোলার নয়! ক্লক টাওয়ার ছাড়িয়ে এক চিলতে পার্কে বসলাম। লোহার রেলিংয়ে বেড় দিয়েছে অচেনা বেগুনি ফুলের লতা। আমার পাশের বেঞ্চে এক উত্তর ভারতীয় পরিবার। দলের দুই দুরন্ত শিশুর দাপাদাপিতে অতিষ্ঠ হয়ে বড়রা হাক পাড়ছেন। বৃদ্ধেরা ব্যস্ত ধর্মালোচনায়। চেনা রোজনামচার একঘেয়ে ছবি স্থান মাহাত্ম্যেই বুঝি মন্দ লাগল না। খানিক বসে, সোনম দোরজির বাতলানো লাল গলির চিনে রেস্তোরার খোজে চললাম রাতের খাওয়া সারতে।



 

 

 

 

 

কালিম্পংয়ের দ্বিতীয় দিন বরাদ্দ স্থানীয় দ্রষ্টব্যের জন্য। সোনমের মারুতি ভ্যানে চেপে আমাদের প্রথম গন্তব্য দেলো পাহাড়। কালিম্পংয়ের সব চেয়ে উচু জায়গায়, ৫৫৯০ ফুট উচুতে এই পাহাড়ের মাথায় আছে ছবির মতো সাজানো উদ্যান। প্রবেশপথে আছে কংক্রিটের জলাধার। বাগানের এক পাশ দিয়ে একেবেকে উঠে গেছে বাধানো রাস্তা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বসার চত্বর, তাদের মাথায় পোক্ত রঙিন ধাতব ছাতা। সবুজ ঘাসে ঢাকা অসমান লনের প্রােন্ত ধুপি আর পাইন গাছের জঙ্গল। মেঘের দল ভেসে এসে হাত বুলিয়ে যায় তাদের পাতায়। কত চেনা অচেনা ফুল-লতা-পাতাবাহারের সংগ্রহ দেলো পাহাড়ে! মরসুমি ফুলের মেলায় ঝাক বেধে উড়ছে প্রজাপতি। মর্নিং গ্লোরির কালচে পাতায় চকচকে লাল-কালো বুটিদার জামা গায়ে একাগ্র লেডিবার্ড। ঝলমলে তুতে রঙা ডানা ঝাপটে ডালে ডালে হুজ্জোতি করছে বি-ইটারের দল। পাহাড়ের মাথায় সুসজ্জিত ট্যুরিস্ট লজ। সরকারি ব্যবস্থাপনায় যেত্নর সুস্পষ্ট ছাপ। একটা ছোট কফি শপও আছে। কফিতে চুমুক দিয়ে ভিউ পয়েেন্ট দাড়িয়ে নীচের উপত্যকায় চোখ পড়ল। অনেক দূরে সরু ফিতের মতো বয়ে চলেছে তিস্তার সর্পিল রেখা। হাটতে হাটতে নেমে এলাম বাগানের পেছন দিকে। এখানেও বিশাল ছাতার তলায় গোলাকার বসার জায়গা। তারপর রেলিং ঘেরা প্রান্তসীমা। হঠাৎ এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে শিউরে উঠলাম! পার্কের সীমানার শেষে ঢালু জমি নেমে গেছে। সেখানে ঠাসাঠাসি দাড়িয়ে পাইনের জঙ্গল। সেই ঘন বনের শ্লীলতাহানি করেছে মানুষের লোভ। সামনের এক সারি গাছকে শিখণ্ডীর মতো দাড় করিয়ে তার পেছনে চলেছে নির্বিচার বৃক্ষনিধন। হায় মানুষ! প্রবাদ উল্লেখিত কালিদাসীয় মূর্খামির যে অন্ত নেই!



 

 

 

 

 

দেলো পাহাড় থেকে নামার পথে পড়ল বিখ্যাত আবাসিক স্কুল ‘ডক্টর গ্রাহাম্‌স হোম্‌স’। স্কটিশ মিশনারি রেভারেণ্ড ডক্টর জন এণ্ডারসন গ্রাহাম ১৯০০ সালে এই স্কুলের পত্তন করেন। তিরপাই পাহাড়ের ওপর রেভারেণ্ড গ্রাহাম এই স্কুল প্রথমে তৈরি করেন অ্যাংলো ইণ্ডিয়ান শিশুদের জন্য। সঙ্গে এক অনাথাশ্রমও চালু হয়। ক্রমে অন্যান্য সম্প্রদায়ের বাচ্চারাও পড়ার সুযোগ পায় এখানে। হোম্‌স মোট ৪০০ একর জমির ওপর বিস্তৃত। স্বয়ংসম্পূর্ণ এই বিদ্যানিকেতন যেন আস্ত এক শহর! খেলার মাঠ, বাস্কেটবল কোর্ট, খেত, খামার, ডেয়ারি, বেকারি নিয়ে তার ফাদালো সংসার। স্কুল চত্বরের ভেতরেই এক পাশে চ্যাপেল। স্কুল সীমানার শেষে নেমেছে গভীর খাদ। সেখানে অনেক নীচে বয়ে চলেছে তিস্তা।

উতরাই পথে মিনিট কুড়ি এগোতেই হনুমানজির মন্দির। পাহাড়চূড়ার ওপর বিরাট বজরঙ্গবলীর মূর্তি। ধাপে ধাপে বাগানঘেরা পথ উঠে গেছে মন্দিরে। এই পাহাড়ের বাক পেরোলেই রাস্তার অন্য পাশে বৌদ্ধ গুহা। ফলক পড়ে জানা গেল, অতীত থেকে শুরু করে আজও এই গুহায় তপস্যা করে চলেছেন বহু বৌদ্ধ ভিক্ষু। গুহার বাইরে ছোট পার্ক। তার মাঝখানে বসে বোধিসেত্ত্বর বিশাল মূর্তির মুখে চিরকালের চেনা িস্মত হাসি। সরু রাস্তা দিয়ে গুহার অন্দরে ঢুকে কিন্তু বিজলি বাতির আলোয় সব কিছু বড্ড সাজানো, বড়ই কৃত্রিম মনে হল।

এ বার গল্ফ কোর্স। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, এই খেলার সঙ্গে বাঙালির খুব সখ্য নেই। তবে দৃষ্টিনন্দন বলেই খেলার মাঠটা চোখ টানে। গল্ফ কোর্সে ঢোকার মুখে এক সবুজ ফলকের ওপর সাদা অক্ষরে লেখা চার্চিলের উক্তি যার মর্মার্থ হল, ‘‘গল্ফ সেই খেলা যার একমাত্র উদ্দেশ্য হল, অতি অপটু হাতিয়ারের সাহায্যে একটা ছোট বলকে একটা খুদে গর্তের মধ্যে ফেলা।’’ সাহেব হক কথা বলেছেন। এর বাইরে গল্ফ সম্পর্কে অন্তত আমার আর কিছু জানার আগ্রহ নেই!



 

 

 

 

 



 

 

 

 

 

 



 

 

 

 

 

 

চড়াই রাস্তায় সেনা ছাউনির পাশে কালিম্পং গোম্ফা। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ মনে শান্তি দেয়। চিরাচরিত তিব্বতি শিল্প রীতির েফ্রেস্কায় মন্যািষ্ট্রর দেওয়াল ও সিলিং মোড়া। এক তলায় প্রার্থনার ঘর। বুদ্ধের বিরাট মূর্তির সামনে সারিবদ্ধ মাখনের প্রদীপ জ্বলছে। ধূপের সুবাস আর প্রাচীন পুথির গন্ধ মিশে আধো আলোকিত প্রশস্ত ঘরে অপার্থিব আবেশ তৈরি করেছে। দোতলার এক পাশে মঠাধ্যক্ষের ঘর আর অন্য পাশে গ্রন্থাগার ও ভাড়ারঘর। তিন তলার ছাদে দাড়িয়ে দেখা যায় সেনাবাহিনীর কসরত করার চওড়া মাঠ। চকমেলানো মঠবাড়ির উঠোনে বাচ্চা লামারা চুঙ্গি খেলছে আর ছেঁড়া মেঘের টুকরো থেকে থেকেই তাদের ঢেকে দিচ্ছে। গোম্ফার রসুইঘরে মাখন-চা পান করে আমরা রওনা দিলাম নার্সারির উদ্দেশে।

কালিম্পংয়ে বেশ কয়েকটা নার্সারি আছে। তার মধ্যে পাইন ভিউয়ের খ্যাতি অনেক দিনের। দর্শনী মাথাপিছু পনেরো টাকা। কর্ণধার মোহন প্রধান বর্ষীয়ান বিনয়ী মানুষ। ভ্রমণার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরিয়ে দেখালেন বিচিত্র ফুল আর লতার সংগ্রহ। সদর ফটকের পাশে সারি দিয়ে বেটেখাটো চেহারার, আনারসের মতো পাতাওয়ালা গাছ। মিস্টার প্রধান পরিচয় করিয়ে দিলেন— সাকিউলেন্ট প্ল্যান্ট্‌স। এদের পাতার রস জারিয়েই তৈরি হয় লাতিন আমেরিকার প্রখ্যাত পানীয়, ট্যকিলা। মুচকি হেসে যোগ করলেন, ‘‘তবে ও বিদ্যে আমার জানা নেই বলে আপনাদের মনোরঞ্জন করতে পারলাম না!’’ নার্সারির ক্যাকটাই কালেকশন বিস্ময় জাগায়। এত রকম প্রজাতির গাছ এরা সংগ্রহ করেছেন যে, দেখলে তাক লেগে যায়। অনেক কাকটাইয়ে ফুলও ধরেছে রকমারি। এক একটা ক্যাকটাসের দাম প্রায় হাজারের কাছাকাছি।



 

 

 

 

 

 

 

নার্সারি-পর্ব সাঙ্গ করে চললাম রবীন্দ্রভবন দেখতে। কিন্তু পৌছে হতাশ হতে হল। যেত্নর অভাবে জীর্ণ হয়ে পড়েছে বাঙালির এই িপ্রয় ভ্রমণস্থান। কবির বাড়িতে এখন ‘চিত্রভানু’ কলাক্ষেত্র খোলা হয়েছে। বন্ধ আছে সেই দফতরও। কপাল খারাপ আমাদের। বাড়ির বাইরেটা দেখেই ক্ষান্ত হতে হল এ যাত্রা। ফিরে চললাম কালিম্পং শহরে, মঙ্গলধাম মন্দির দেখতে। পরনামি গোষ্ঠীর এই মন্দির তৈরি হয়েছে ১০৮তম গুরু মঙ্গলদাসজি মহারাজের পুণ্য স্মৃতিতে। আগাগোড়া গোলাপি রঙের মন্দিরে অধিষ্ঠিত কৃষ্ণের বিগ্রহ। নানা রঙে রাঙানো ভেতরের দেওয়ালে আকা কৃষ্ণলীলার বিভঙ্গ।



 

 

 



 

 

 

 

 

সারা দিনের ঘোরাঘুরি সেরে ক্লক টাওয়ারের কাছে গাড়ি থেকে নামলাম বিকেল পাচটায়। ক্লান্ত শরীর টেনে হোটেলের পথ ধরতে যাব, এমন সময় নাকে এল সসেজ ভাজার মোহিনী সুঘ্রাণ। খোজ নিয়ে দেখি ফুটপাথের ওপর ঠেলাগাড়ি নিয়ে নেপালি কিশোর কড়াইয়ের ফুটন্ত তেলে বিঘতখানেক লম্বা সসেজ ভেজে চলেছে একের পর এক। তবে গোটা নয়, খণ্ডাকারে কেটে। হলপ করে বলতে পারি, কলকাতার বিভিন্ন শীতাতপনিয়িন্ত্রত বাজারে বিকোনো ককটেল অথবা ফ্র্যাঙ্কফার্টারের তুলনায় তার স্বাদ অমৃতসমান। এ ছাড়া ভাজা হচ্ছে ফালে। এ জিনিস আগে খেয়েছি সিকিমে তবে সেখানে তার নাম ‘শেফ্যালাক’। ময়দার দুটো লেচির মাঝে কিমার পুর ঠাসা। কিন্তু ময়দায় ময়ান না দেওয়ায় ঠাণ্ডা হলেই শক্ত হয়ে যায় এই খাবার। পেটপুজো সেরে হাটা দিলাম হোটেলের দিকে।