Friday, 20 April 2012

কালনা (বর্ধমান)



কালনা (বর্ধমান) 

ভাগীরথীর পাড়ে ছোট্ট একটি শহর কালনা। মূলত ধান-চালের ব্যবসার সূত্রে এই শহর ক্রমশ জনিপ্রয় হয়ে ওঠে। অতীতে জলপথ ধরে ধান-চাল এখান থেকে পৌছাত দেশের বিভিন্ন স্থানে। ব্যবসায়ীদের এই শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ঐতিহাসিক মন্দির মসজিদ। টেরাকোটার অপূর্ব কারুকাজে তৈরি বেশির ভাগ মন্দিরই বর্ধমান রাজপরিবারের তৈরি

১.





শহরের মাঝামাঝি স্থানে রয়েছে ১০৮ শিবমন্দির। শিবমন্দিরগুলি দুটি বৃত্তে সাজানো। প্রথম বৃত্তে রয়েছে ৭৪টি মন্দির। ভিতরের বৃত্তে রয়েছে ৩৪টি মন্দির। ১৮০৯ সালে মহারাজ তেজচেন্দ্রর সময়ে নির্মিত মন্দিরগুলির ভিতরে রয়েছে শ্বেতপাথর ও কালো পাথরের শিবলিঙ্গ। আটচালা শৈলীতে নির্মিত এই মন্দিরগুলিকে উচু জায়গা থেকে দেখলে মনে হবে পাপড়ি মেলা পদ্ম।

২. 






১০৮ শিবমিন্দেরর উল্টো দিকে রয়েছে রাজবাড়ি কমেপ্লক্স। এই কমেপ্লেক্সর মধ্যে রয়েছে ২২টি পুরনো মন্দির। এর মধ্যে কয়েকটি মন্দিরের টেরাকোটার কারুকাজ চোখ টানে। ওড়িশার রেখদেউলের আদলে তৈরি হয়েছে প্রতাপেশ্বর মন্দির। বর্ধমান মহারাজ প্রতাপচাদের স্মৃতি রক্ষার্থে মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল। মন্দিরের গায়ে শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা, রাবণের দুর্গাপুজো-সহ নানান পৌরাণিক দৃশ্য খোদিত।

৩. 






এ ছাড়াও রয়েছে ৬০ ফুট উচ্চতার কৃষ্ণচেন্দ্রর মন্দির। মন্দিরটি ২৫ চূড়ার। এই কমেপ্লেক্সর মধ্যে রয়েছে আরও একটি ২৫ চূড়ার মন্দির। সেটির নাম লালজী মন্দির। কথিত আছে ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে রাজমাতা ব্রজকিশোরী দেবীর বৃন্দাবন যাত্রাকে উপলক্ষ করে মন্দিরটি নির্মিত হয়। এ ছাড়াও গিরিগোবর্ধনের মন্দির, লালজী মন্দির, কৃষ্ণচন্দ্রজী মন্দিরের কারুকার্য চোখ ধাধাবে। কমেপ্লেক্সর মধ্যে রয়েছে রংবাহারি ফুলের বাগান। পুরাতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে থাকা বাগানের পরিষেবা মনোরম।

৪. 






রাজবাড়ির বাইরে সিদ্ধেশ্বরী পাড়ায় আছে আর একটি ২৫ চূড়ার মন্দির। গোপাল জীউর মন্দির নামে এই মন্দিরটি ১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত। এই মন্দিরটি প্রথম ধাপে ১২টি, দ্বিতীয় ধাপে ৮টি, তৃতীয় ধাপে ৪টি এবং মূল শিখরে রয়েছে ১টি চূড়া। কালনার ইতিহাস থেকে জানা যায়, দেশের একমাত্র এই শহরেই রয়েছে তিনটি ২৫ চূড়ার মন্দির। এ ছাড়াও জগন্নাথ বাড়ির জোড়া শিবমন্দির, অনন্ত বাসুদেব মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির নজর কাড়বে।
শহরের দঁাতনকাঠিতলায় রয়েছে হাবসি আমলের প্রাচীন মসজিদ। মসজিদ-ই-মজলিস নামে মসজিদটির গঠনশৈলী মন কাড়ে।

শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রাজমাতা মন্দির, মাইজী মন্দির, জগানন্দ মঠ সহ আরও বহু মন্দির।

যাতায়াত

– বাস: উল্টোডাঙা, এসপ্ল্যানেড, বারাসাত স্ট্যাণ্ড থেকে নদিয়া জেলার শান্তিপুরগামী বাসে চেপে শ্যামচাঁদ মোড় অথবা ডাকঘর মোড়ে প্রথমে নামতে হবে। সেখান থেকে ১০ কিলোমিটার দূর কালনা ঘাট। এ ক্ষেত্রে বাস, ট্রেকার অথবা অটো মিলবে। কালনা ঘাট থেকে নৌকায় কালনা শহরে পৌছতে হবে। ঘাটে সরকারি ফেরি চালু থাকে রাত দশটা পর্যন্ত।

– গাড়ি: গাড়িতে নিবেদিতা ব্রিজ, বালি ব্রিজ অথবা দ্বিতীয় হুগলি সেতু পেরিয়ে এক্সেপ্রসওয়ে ধরে হুগলি জেলার গুড়াপে আসতে হবে। এখান থেকে কালনাগামী রাস্তা ধরতে হবে। অথবা দিিল্ল রোড ধরে প্রথমে মগরা, পরে সেখান থেকে এস.টি.কে.কে রোড ধরে কালনা শহরে পৌছনো যায়।

– ট্রেন: হাওড়া স্টেশন থেকে সরাসরি অম্বিকা-কালনা স্টেশনে আসার সারা দিন ট্রেন মিলবে। অথবা হাওড়া থেকে প্রথমে ব্যাণ্ডেল স্টেশন। পরে এখান থেকে ব্যাণ্ডেল-কাটোয়া লাইনের ট্রেন ধরে এই স্টেশনে পৌছনো যায়। সকালে শিয়ালদহ স্টেশন থেকেও ট্রেন মেলে।

আস্তানা

– পান্থনীড়
(কালনা পুরসভা পরিচালিত)
১৩ নম্বর ওয়ার্ড, নেপপাড়া
– হোটেল প্রিয়দর্শিনী
কালনা বাস স্ট্যাণ্ডের সামনে রয়েছে এই হোটেলটি।
ফোন- ০৩৪৫৪-২৫৫৬১৫ মোবাইল- ৯৭৩২০৭৬৬৯০
খরচ- তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা।

আশেপাশে

– বাংলার কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামব্রহ্ম বাড়ি। এখানে রয়েছে বৈষ্ণবগুরু ভগবান দাস বাবাজীর সমাধিস্থল ও সাধন ক্ষেত্র। বাড়ির একপাশে রয়েছে পাতাল গঙ্গা নামে একটি কুয়ো। জনশ্রুতি, বৃদ্ধ বয়সে ভগবান দাস গঙ্গা স্নান করতে যেতে পারতেন না। তখন মা গঙ্গা তাকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে তার বাড়ি চলে আসেন।
– মহাপ্রভু পাড়ায় রয়েছে ‘নিতাই গৌর মন্দির’। এই মন্দিরে নিতাই ও গৌরের দারু মূর্তি রয়েছে। শ্রীচৈতন্য যে নৌকায় কালনায় এসেছিলেন তার বৈঠা এবং মহাপ্রভুর নিজে হাতে লেখা কিছু পুথিও এই মন্দিরে সংরক্ষিত। এ ছাড়াও এই শহরে রয়েছে নিত্যানন্দ প্রভুর শ্বশুরবাড়ি এবং বিবাহস্থল।
— জীবনের বেশির ভাগ সময়টা কালনা শহরে কাটিয়ে ছিলেন ভবা পাগলা। সাধক কবি এখানে তৈরি করেন ভবানী মন্দির। সে মন্দিরে খোদাই করা আছে সাধক কবি স্বরচিত প্রচুর কবিতা ও গান। এই শহরেই রয়েছে আর এক সাধক কবি কমলাকান্তের বাস্তু ভিটা।
– শহরের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলি খুটিয়ে দেখতে সময় লাগবে দু’দিন। এক ঘেয়েমি কাটাতে তৃতীয় দিন যাওয়া যেতে পারে শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে পূর্বস্থলী ব্লকের চুপি গ্রাম। এই গ্রামে ভাগীরথীর ছেড়ে যাওয়া অংশে পঞ্চায়েত সমিতি তৈরি করেছে ‘পাখিরালয়’। দেশ-বিদেশের পরিযায়ী পাখিরা মিষ্টি জলের খোজে এইখানে পাড়ি জমায়। তবে পাখি দেখার জন্য শীতকালকে বাছাই ভাল।
– পাখিরালয়ের কাছাকাছি রয়েছে পিকনিক স্পট। এখান থেকে কাছাকাছি বিদ্যাসাগর গ্রামে রয়েছে মহাপ্রভু বাল্য শিক্ষাস্থল। এবং পণ্ডিত বাসুদেব সার্বভৌমের মন্দির।
– জাহন্নগর গ্রামে গেলে দেখা মিলবে সারঙ্গ মুরারীর আশ্রম এবং চৈতন্য ভাগবৎ রচয়িতা বৃন্দাবন দাসের জন্মস্থান। এই গ্রামের পাশে রয়েছে প্রাচীন চাদের বিল।

মূর্তি (উত্তরবঙ্গ)

মূর্তি (উত্তরবঙ্গ)

এক দিকে গরুমারা, অন্য দিকে খুনিয়া। ঠিক মাঝখানে ‘বনানী’। মূর্তির বনবাংলো। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে মূর্তি নদী। দোতলার ব্যালকনিতে চুপচাপ বসে মোহময়ী মূর্তির চঞ্চলতা, আরণ্যক সৌন্দর্য, জলের কলকল শব্দ শুনলে মন কেমন করবেই। বুনো হাতির জলক্রীড়াও চোখে পড়তে পারে। দিন কাটানো যায় পাখির গান শুনেও।

মূর্তিতেই তৈরি হয়েছে কিশোর কিশোরীদের জন্য মূর্তি ক্যাম্প। দল বেধে সেখানে থাকা, প্রকৃতি বীক্ষণের সুযোগ হাতছাড়া না করাই ভাল। দেখাশোনার সব দায়িত্ব বন দফতরের।


১.                                                                                                                                                                                                                                      মূর্তি থেকে বেড়ানো যায় খুনিয়ার চন্দ্রচূড় মিনার, চাপড়ামারি বনবাংলো, ঈগল নজরমিনার, ওয়াইল্ডারনেস ক্যাম্প, কুমাই, ঝালং, বিন্দু, রকি আইল্যাণ্ড। খোজখবর করে ডুয়ার্সের আরও অনেক নাম না জানা জায়গায় যাওয়া যেতে পারে মূর্তি থেকেই। ফেরার সময়ে বাতাবাড়ি চা বাগান, গরুমারায় যাত্রাপ্রসাদ টাওয়ার দেখতে ভুলবেন না।




২.




যাতায়াত


শিলিগুড়ি থেকে মূর্তি ৮০ কিলোমিটার। শিলিগুড়ির মিত্তাল টার্মিনাস থেকে বাসে চালসা। সেখান থেকে জিপ বা ট্রেকার ভাড়া করা যায়। এন জে পি ও শিলিগুড়ি থেকে সরাসরি গাড়ি ভাড়া নিয়েও যাওয়া যায়।

আস্তানা

১৫ই জুন থেকে ১৫ই সেপ্টেম্বর জঙ্গল বন্ধ। এই সময়টুকু ছাড়া সারা বছরই দরজা খোলা মূর্তি বনবাংলোর। সুসজ্জিত ৯টি দ্বিশয্যার ঘর ছাড়াও এখানে আছে জঙ্গল ও নদীমুখো ২টি কটেজ। এই মনোরম পরিবেশে কয়েকটা ছুটির দিন কাটাতে গেলে আগাম বুকিং করতে হবে। মনে রাখা দরকার, এপ্রিল-মে এবং অেক্টাবর-নভেম্বর মাসে পর্যটক সমাগম বাড়ে।
এই বনবাংলো ছাড়াও রয়েছে ছোট মাপের কটেজ রেতি ও ডায়ানা। হালে আরও একটি কটেজ তৈরি করেছে বন দফতর।
সরকারি উদ্যোগ ছাড়া মূর্তিতে এখন উত্তর ধূপঝোরার গ্রাম পঞ্চায়েত পরিচালিত মূর্তি পর্যটন আবাস, বনশ্রী, ডুয়ার্স নেস্ট, মূর্তি রিভার বেডের মতো জায়গায় থাকা খাওয়ার

ব্যবস্থা। যোগাযোগ:
বীরেন রায়, উত্তর ধূপঝোরা,
ফোন: ৯৭৩৩১ ৫৭৮৩৮
এবং
পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগম
নিগমের ফোন: ০৩৫৩ ২৫১৬৩০৬।
অন লাইন বুকিং করতে হলে: www.wbtourism.com

আশেপাশে

মূর্তির কাছাকাছি বেশ কয়েকটি দর্শনীয় জায়গা আছে। এর মধ্যে ঘুরে আসা যায়:
১০ কিলোমিটার দূরের খুনিয়া নজরমিনার। এখানে দাড়িয়ে দেখা মিলতে পারে বন্য জন্তুর।
জলদাপাড়া অভয়ারণ্য।
১৫ কিলোমিটার দূরের গরুমারা অভয়ারণ্য।
৬ কিলোমিটার দূরের চাপড়ামাড়ি অভয়ারণ্য।

রসুলপুর (বীরভূম)

রসুলপুর (বীরভূম)

 

বীরভূম জেলার পর্যটন মানচিত্রে নতুন নাম শ্রীনিকেতন-বোলপুর ব্লকের রসুলপুর গ্রাম। তবে বাস্তবে ওই নামটি প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। গ্রামটিকে এখন সবাই ‘সবুজ বন’ বলেই চেনেন। বীরভূমে পর্যটন কেন্দ্র বলতে শান্তিনিকেতন আর বাদবাকি ধর্মীয় স্থান। কিন্তু সবুজ বন মূলত হরেক গাছের সংগ্রহশালা। গাছ দিয়ে সাজানো ৮৫ বিঘা জায়গা ও ১৫ বিঘা জলাশয় প্রকৃতি-প্রেমিকদের কাছে অসাধারণ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

১.







শহরের কোলাহল ও শব্দদূষণ থেকে মুক্তি পেতে সবুজ বনে দুচোখ ভরে সবুজ দেখতে ও প্রাণ ভরে অক্সিজেন নিতে প্রতি সপ্তাহের শেষে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। গাছেপ্রমী গবেষকরাও প্রায়ই এখানে আসেন। দেশীয় গাছ ছাড়াও দেখা যায় ব্রাজিলের ল্যাটিনিয়া লুব্রা, আফ্রিকার ৩৭ প্রজাতির সাইক্যাস, মেক্সিকোর নলিনাস, ২৭৪টি প্রজাতির পামগাছ আর প্রচুর অ্যাডেলিয়াম গাছ। সবুজ বনের মালিক আব্দুস সেলিম জানিয়েছেন, দেশ বিদেশের ৪২০০ প্রজাতির গাছ রয়েছে সেখানে। গাছগুলির বিন্যাসও শিল্পসম্মত। ১৭ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে নানা গাছের সমারোহ। তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম নদী। বাশের সাকো দিয়ে সেই নদী পারাপার আনন্দ দেয়। রয়েছে বোটও। বারো মাসই এখানে কোকিলের ডাক শোনা যায়। তালগাছে বাবুই পাখির বাসা এখন দুর্লভ হলেও সবুজ বনে ঝাঁকে ঝাঁকে তাদের দেখা মেলে। নদীতে চড়ছে রাজহাঁসের দল। ইতস্তত চড়ে বেড়াচ্ছে বেপরোয়া কাঠবেড়ালি, বেজি বা নেউল। বনের পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় দেশি কুকুর।

২. 





কটেজের সামনে একফালি সবুজ ঘাসের গালিচা। তার ওপরে খালি পায়ে হাঁটতে হাটতে মনে পড়ে যায় ছেলেবেলার ফেলে
আসা দিনগুলি। বিশ্রাম নেওয়ার জন্য মাঝে মাঝেই সুদৃশ্য ছাউনি আছে। রাতে টিমটিমে বিদ্যুতের আলোয় পুকুরের ওপর বাশের মাচায় বসে আড্ডা মারা ও রাতের খাবার খেতে ভালই লাগবে। সবুজ বনের সামনেই অজয় নদ। তার পাড়ে বসেও কেটে যায় অনন্ত সময়। কাছের ইটিণ্ডা ও সুপুর গ্রামে কয়েকশো বছরের প্রাচীন টেরাকোটার মন্দিরগুলি আকর্ষণীয়। তাদের ইতিহাস জানতে চাইলে অবশ্য শরণাপন্ন হতে হবে বিশেষজ্ঞদের। স্থাপত্যের বিচারে এই ২টি মন্দির বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

৩. 




যাতায়াত


– কলকাতা থেকে ট্রেনে বোলপুর স্টেশনে নেমে গাড়ি ভাড়া করতে হবে। বোলপুর স্টেশন থেকে দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। গাড়ি ভাড়া পড়বে ৩০০ টাকার মতো। আগে থেকে ফোন করে গেলে সবুজ বন কর্তৃপক্ষ গাড়ির ব্যবস্থা করেন। বোলপুর থেকেও প্রচুর গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়।
– বাসেও অবশ্য যাওয়া যায়। বোলপুর- পাচশোয়া- ইক্ষুধারা রুটের বাস ধরে রসুলপুর মোড়ে নেমে ৫০০মিটার হাঁটা রাস্তা।

৪. 



আস্তানা


— এখানে থাকার জন্য রয়েছে মোট ৭টি কটেজ। এর মধ্যে দুটি বাতানুকূল। খড়ের ছাউনি দেওয়া সাধারণ কটেজগুলিতে থাকাও আরামদায়ক।
– বাতানুকূল কটেজের প্রতিটির দৈনিক ভাড়া এক হাজার টাকা। দুটি কটেজে ৪ জন করে থাকা যায়।
– ৫০০ টাকায় কটেজ রয়েছে ২টি। তাতে ৩ জন করে থাকা যায়।
– এখানে সব ধরনের খাবার পাওয়া যায় সুলভ মূল্যে। তবে খাওয়ার ব্যাপারে আগে থেকে জানাতে হবে।
– ৭০০ টাকার ৩টি কটেজের প্রতিটিতে থাকা যায় ৪ জন।
যোগাযোগের ফোন নম্বর: ৯৯৩২৫৮৯২৪৪(মোবাইল), ল্যাণ্ড ফোনের নম্বর : ০৩৪৬৩-৬৪৫০৩৫।
– বিশেষ সতর্কতা: বি এস এন এল মোবাইলের টাওয়ার পাওয়া যায় না।

৫. 




আশেপাশে


– এক-দেড় কিলোমিটার দূরে ইটিণ্ডা ও সুপুর গ্রামে কয়েকশো বছরের প্রাচীন টেরাকোটার মন্দিরও দেখে আসা যায়।

লালজল (মেদিনীপুর)

লালজল (মেদিনীপুর)

 

পাহাড়ের মাঝে ছবির মতো গ্রাম লালজল। বেলপাহাড়ির এই গ্রামে আছে আদিম মানব গুহা-সহ বহু প্রাচীন নিদর্শন। প্রত্ন গবেষকদের ধারণা, কয়েক হাজার বছর আগে লালজলই ছিল প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক সমৃদ্ধ ক্ষেত্র। এখানকার ঝরনার জল সামান্য লালচে। তামা ও লোহা মিশ্রিত জল কিন্তু বেশ সুস্বাদু। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, লাল রঙের এই জলের কারণেই গ্রামটির নাম লালজল।

১. 






বেলপাহাড়ি থেকে বাশপাহাড়ি যাওয়ার পিচ রাস্তা ধরে ১৯ কিমি গেলে পড়ে লালজল মোড়। সেখান থেকে ডান দিকে লাল পাথুরে রাস্তায় পাহাড়ি উতরাই পেরিয়ে ২ কিমি মতো এগোলেই লালজল। চার দিকে পাহাড়ের মাঝে এই গ্রাম। গ্রামের পশ্চিমে দেওপাহাড়ে রয়েছে আদিম মানবের গুহা। দক্ষিণ পূর্ব অংশ জুড়ে সিংলহর পাহাড়ের শ্রেণি। আর গ্রামের উত্তরে রয়েছে রানিপাহাড়।

দেওপাহাড়ে আদিম মানবের গুহাটি দেখতে হলে পাহাড়ের খাজ ধরে সতর্ক ভাবে উঠতে হয়। হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে হয় গুহায়। সঙ্গে টর্চ রাখলে ভাল। কারণ, সেখানে বাদুড় শেয়ালের আস্তানা। গুহার দেওয়ালে খোদাই করা নানা ছবি।

গ্রামবাসীদের মতে, ১৯৬২ সালে রামস্বরূপ নামে এক সন্ন্যাসী লালজলে এসে ওই গুহায় আশ্রয় নেন। সাধুর পোষ্য ছিল একটি চিতাবাঘ। জনশ্রুতি, ওই চিতাবাঘের সঙ্গেই গুহায় বাস করতেন সন্ন্যাসী রামস্বরূপ। ১৯৯৫ সালে রামস্বরূপ মারা গেলে দেওপাহাড়ের কোলেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। রামস্বরূপের উদ্যোগেই লালজল গ্রামে ১৯৮৩ সালে বাসন্তী পুজোর প্রচলন হয়। এখনও চল রয়েছে সেই পুজোর। সে সময়ে পাচ দিনের মেলা বসে লালজলে।

২. 




যাতায়াত


– লালজল যেতে হলে পর্যটকদের ঝাড়গ্রামে আসতে হবে। ঝাড়গ্রাম থেকে লালজলের দূরত্ব ৬২ কিলোমিটার। ভাড়ার গাড়িতে শুধু লালজল গেলে খরচ পড়বে এক হাজার টাকা। তবে ভাড়ার গাড়িতে প্যাকেজ ট্যুর করলে লালজল-সহ অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলি দেখতে খরচ পড়বে ১৫০০ টাকা।

আস্তানা

কাছাকাছি থাকার জায়গা বলতে ঝাড়গ্রাম:

রেল স্টেশনের সামনেই রয়েছে ঝাড়গ্রাম পর্যটন অনুসন্ধান কেন্দ্র (ফোন নম্বর: ০৩২২১-২০৫২০২)।
এখানে ফোন করে যে কোনও তথ্য ও হোটেল, গাড়ি বুকিং করা যায়।
ঝাড়গ্রাম শহরে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে লজ-হোটেলগুলিতে ডবল বেড (অ্যাটাচড্‌ বাথরুম) ঘর পাবেন।
এ ছাড়া ৬০০, ৮০০ থেকে ১৩৫০ টাকার মধ্যে বাতানুকূল ডবল বেড রুম পাবেন।

ঝাড়গ্রাম পুরসভার বনানী অতিথি নিবাস ( ফোন: ০৩২২১-২৫৭৯৪৫)। ‘বনানী’র ম্যানেজার অঞ্জন ঘোষের মোবাইলে ফোন করেও (৯৮৩২৭৯১২৭০) রুম বুক করা যাবে। এখানে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে ডবল বেড ভাল ঘর পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ৬০০ টাকায় বাতানুকূল ঘর এবং ৮০০ টাকায় বাতানুকূল ভি আই পি স্যুইট পাবেন। বনানীর নিজস্ব প্যাকেজ ট্যুরও আছে। খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও ভাল।

বেলডাঙ্গা (বাকুড়া)

বেলডাঙ্গা (বাকুড়া) 

 

সোনামুখী বনবাংলো থেকে রাঙামাটির আকাবাকা সামান্য পথ পেরোলেই বেলডাঙা। জঙ্গল লাগোয়া ছোট্ট ড্যাম। সেখানেই একটা জলাশয়কে ঘিরে রয়েছে বেলডাঙা প্রকৃতি উদ্যান। সেপ্টেম্বরে দলমা পাহাড় থেকে খাবার জলের সন্ধানে কখনও কখনও হাতির পাল নেমে আসে এই জঙ্গলে, এই জলাশয়ে।

১. 

 

 

 

 

হিস্ত দর্শন যদি নাও হয়, বাচ্চাদের নিয়ে প্যাডেল বোটে জলে ভাসুন। তারপর সেন্ধ নামার আগেই হাটা পথে অথবা গাড়িতে ফিরুন বাংলোয়। রাত যত গাঢ় হবে শোনা যাবে হায়না বা শেয়ালের ডাক। গাছের পাতার খসখস শেব্দ মালুম হবে আরও কত বন্য জন্তুর আনাগোনা। দিনের বেলায় ওই গভীর অরণ্যের সঙ্গে যখন হবে আপনার ঘনিষ্ঠ মিতালি, চোখে পড়তেও পারে ময়ূর অথবা হরিণ। দুপাশে অরণ্য মোড়া কালো পিচ রাস্তা ফুড়ে ছুটে যায় নেউল, সাদা খরগোশ।

২. 

 

 

 

 

বিস্তৃত শাল জঙ্গলকে ঘিরে কত না গাছগাছালি। বট, অশ্বত্থ, আম, জাম, শিমুল। পায়ের কাছে লজ্জাবতী লতা। তিনটে দিন সবুজ প্রান্তে এমন ভ্রমণ ভাল লাগার কথা। যদি পূর্ণিমার সময় হিসেব কষে আসা হয় তা হলে তো কথাই নেই। মাথার ওপরে সবুজ দিগেন্ত আলো ঠিকরে দেওয়া এক টুকরো চাদ। বাংলোর বারান্দা থেকে তার রূপ আস্বাদন করা যাবে অনেক রাত পর্যন্ত।

৩.

 

 

 

 

 

যাতায়াত
– হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে বর্ধমান। সেখান থেকে বাকুড়ার বাস ধরে সোনামুখী।
– সরাসরি সোনামুখীর বাসও পাওয়া যায়। জনপ্রতি হাওড়া থেকে ভাড়া পড়বে ৪০ টাকা।

আস্তানা

– সোনামুখী রেেঞ্জর বনবাংলো
ডি এফ ও, বাকুড়া (উত্তর)
ফোন: ০৩২৪২-২৫০৭৫৮
৩ জনের দৈনিক ভাড়া ৪০০ টাকা। এক জন চৌকিদার আছেন। তাকে খরচপাতি দিলে রান্নার ব্যবস্থা করে দেন।
– সোনামুখী পুর আবাসিক ভবন
ম্যানেজার, সোনামুখী,
পুর আবাসিক ভবন,
ফোন: ০৩২৪৪-২৭৫৯৬০
সেখানে ডবল বেড রয়েছে ৮টি। ভাড়া ঘর প্রতি ১২৫ টাকা। ডর্মিটরিতে রয়েছে ১০টি বেড। বেডপ্রতি ভাড়া ৪০ টাকা।
খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। তবে সামনেই খাওয়ার হোটেল। দুবেলা সেখানে খেয়ে হোটেলে ঢুকতে হবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, এমন নৈঃশব্দ ভ্রমণে সোনামুখী বনবাংলো উপযুক্ত জায়গা। কিন্তু একান্তে থাকার ব্যবস্থা না হলে সোনামুখী পুর আবাসিক ভবনই ভরসা। তিন দিনের ট্যুরে জনপ্রতি আনুমানিক খরচ ন্যূনতম ৫০০ টাকা। অতএব, বেরিয়ে পড়া যায় কর্মক্লান্ত কলকাতার খুব কাছে বেলডাঙ্গার নিভৃত জঙ্গলে।

৪.

 

 

 

 

 

আশেপাশে

সোনামুখী শহরের ভেতরে পচিশ চূড়াযুক্ত টেরাকোটা অলংকৃত শ্রীধর মন্দির। স্থাপিত ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে।
১৮৩৫-এ তৈরি গিরিগোবর্ধন মন্দিরটিও দর্শনীয়।
জৈন তীর্থঙ্করের মূর্তি সমিন্বত স্বর্ণমুখী দেবীর মন্দির। যার নাম থেকেই সোনামুখী শহরের নামকরণ।
কোম্পানি আমলের নীলকুঠির ধ্বংসচিহ্ন। রামনবমীতে এখানে মনোহর দাসের মেলা বসে।
জমে ওঠে বাউল আখড়া। এ ছাড়া কালী ও কার্তিক পুজো এখানে এতই বিখ্যাত, সেখানে ঢল নামে মানুষের।

Thursday, 19 April 2012

ফাসিডাঙা (মেদিনীপুর)

ফাসিডাঙা (মেদিনীপুর)

ঐতিহাসিক শহর চন্দ্রকোনার অদূরে এই নীলগঞ্জ এলাকায় ইংরেজ আমলে বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। আজও রয়ে গেছে ফাসির মঞ্চটি। আর দেশের জন্য বলিপ্রদত্ত সেই বীর সেনানীদের স্মৃতিতে জায়গাটির নাম হয়েছে ফাসিডাঙা।

 ১।

 

 

 

 

 

 

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এই জনপদ একটা সময় জমিদারদের অধীনে ছিল। সপ্তদশ শতকের শেষ এবং অষ্টাদশ শতকের শুরুতে তৎকালীন জমিদাররা ইংরেজদের অস্বাভাবিক করের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। প্রজারাও এই লড়াইয়ে অংশও নেন ও পরবর্তী কালে তা ব্যাপ্ত হয় চূয়াড় বিদ্রোহ হিসেবে।

ইংরেজ শাসকরাও বিদ্রোহীদের আতুড়ঘরে আক্রমণ করে। ঘন শালের জঙ্গলে একে একে বিদ্রোহীদের ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। শতাধিক বিদ্রোহী শহিদ হন।

যাতায়াত ও আস্তানা
হাওড়া থেকে চন্দ্রকোনা টাউন। চন্দ্রকোনা টাউন থেকে ফাঁসিডাঙা। হাওড়া থেকে চন্দ্রকোনা টাউন তিন ভাবে আসা যায়:

(ক) হাওড়া আন্তঃজেলা বাসস্ট্যাণ্ডের ‘দিঘা বাসস্ট্যাণ্ড’ থেকে ‘হাওড়া-চন্দ্রকোনা’, ‘হাওড়া-চন্দ্রকোনা রোড’, ‘হাওড়া-গোয়ালতোড়’ কিংবা ‘হাওড়া- গড়বেতা’ বাস ধরে চন্দ্রকোনা টাউনের ‘গাছশীতলা মাড়ো’- তে নামতে হবে। ওখান থেকে রিকশা বা ট্যািক্সতে ফাঁসিডাঙা।

‘হাওড়া-চন্দ্রকোনা’, ‘হাওড়া-চন্দ্রকোনা রোড’, ‘হাওড়া-গোয়ালতোড়’ কিংবা ‘হাওড়া-গড়বেতা’ সরাসরি বাস না পেলে ‘হাওড়া-ঘাটাল’, ‘হাওড়া-খড়ার’, মোট কথা ঘাটালগামী কোনও বাসে ঘাটালে নামতে হবে। ঘাটাল থেকে চন্দ্রকোনা টাউনগামী বাস চেপে চন্দ্রকোনা টাউনের ‘গাছশীতলা মাড়ো’- তে নামতে হবে। প্রয়োজনে ঘাটাল শহরে নেমে রাত কাটানো যেতে পারে। ঘাটাল শহরের কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যাণ্ডেই লজ রয়েছে। হাওড়া থেকে চন্দ্রকোনা টাউনের ‘গাছশীতলা মাড়ো’ পর্যন্ত মোট পথ ১২৪ কিমি। বাসে মাথাপিছু ভাড়া ৫৫ টাকা। লজে মাথাপিছু ভাড়া: ১০০ টাকা। খাওয়া: নিজের মতো।

চন্দ্রকোনা টাউনের ‘গাছশীতলা মাড়ো’ থেকে ফাঁসিডাঙা ভাড়া- রিকশা: ২৫ টাকা। ট্যািক্স: ১০০ টাকা।

(খ) প্রাইভেট কার: ধর্মতলা থেকে কোনা এক্সেপ্রসওয়ে ধরে মুম্বই রোড। মুম্বই রোডের মেচোগ্রামের ক্রসিং পার হয়ে ‘গাছশীতলা মাড়ো’। দূরত্ব ১২৪ কিমি।

(গ) হাওড়া থেকে ট্রেনে পাশকুড়া। পাশকুড়া থেকে বাসে ঘাটাল হয়ে ‘গাছশীতলা মাড়ো’। ভাড়া: ট্রেন: ১৫ টাকা। বাস: ২৫ টাকা।

 

ডাইনটিকরি (মেদিনীপুর)

ডাইনটিকরি (মেদিনীপুর)

পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড় ব্লকের ডাইনটিকরি গ্রামে রয়েছে প্রাচীন এক বৌদ্ধ মন্দির। মাকড়া (ঝামা) পাথরে তৈরি মন্দিরটি উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে এখন ধ্বংসের মুখে। কংসাবতী লাগোয়া ডাইনটিকরিতে নদীর ধারেই রয়েছে মন্দিরটি। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, যে ভাবে পাড় ভাঙতে ভাঙতে নদী এগিয়ে আসছে, তাতে প্রাচীন যুগের এই নিদর্শনটি যে কোনও দিন নদীগর্ভে তলিয়ে যেতে পারে। বৌদ্ধ এই মন্দির বা উপাসনালয়টিকে নিয়ে স্থানীয় ও বাইরের একাধিক গবেষক ক্ষেত্র-সমীক্ষা করেছেন। মন্দির বাচাতে গ্রামবাসীরা প্রশাসনের নানা মহলে স্মারকলিপিও দিয়েছেন। কিন্তু সংস্কার-সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়নি।

১।

 

 

 

 

 

 

খ্রিস্টীয় একাদশ-দ্বাদশ শতকে মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল বলে অনুমান। মন্দির পূর্বমুখী। চৌকো, আয়তাকার ঝামা পাথর অনুপম জ্যামিতিক ধাচে স্তরে স্তরে সাজিয়ে মন্দিরটি তৈরি হয়েছে। দু’টি পাথরের মাঝে সিমেন্ট জাতীয় কিছু ব্যবহার করা হয়নি। মন্দিরের চূড়ায় ন’টি ধাপ। ভেতরের ছাদটি লহড়া পদ্ধতিতে নির্মিত। বিগ্রহহীন মন্দিরের প্রবেশপথে বর্তমানে কোনও

দরজা না থাকলেও অনেক আগে লোহার দরজা ছিল বলে ধারণা। মন্দিরের সামনে রয়েছে মাটির ঢিবি। অনুমান, সেটির ভেতর প্রত্নতািত্ত্বক নিদর্শনও থাকতে পারে। মন্দিরে যে আগে যাগযজ্ঞ হত, তার প্রমাণস্বরূপ আশেপাশে প্রাচীন পাত্রের ভাঙা অংশ ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। মন্দিরের নীচে একটি সুড়ঙ্গ কংসাবতীর তীর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। যদিও কালের গর্ভে ওই সুড়ঙ্গপথ এখন মাটিচাপা পড়ে গিয়েছে।

জনশ্রুতি, এই অঞ্চলে আগে ডাইনিরা থাকত। গ্রামের লোকজন তাদের টুকরো টুকরো করে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। সেই থেকেই নাকি গ্রামের নাম প্রথমে হয় ‘ডাইন টুকরি’ পরে ‘ডাইনটিকরি’। আবার অনেক গবেষকের মতে, গ্রামের দক্ষিণে অর্থাৎ ডান দিকে গ্রামের ‘টুকরো সম্পদ’ বৌদ্ধ মন্দিরটি অবিস্থত। তা থেকেই গ্রামের এই নাম।

মন্দির নিয়েও প্রচলিত রয়েছে নানা লোককথা। রংকিনি নামে রাক্ষসী এই মন্দিরে থাকত। গ্রামের মানুষের কাছ থেকে জোর করে নানা ধরনের খাবার আদায় করত সে। প্রতিদিন এক জন করে মানুষও খেত। রাক্ষসীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা। একদিন এক রাখাল যুবকের পালা পড়েছিল রাক্ষসীর কাছে যাওয়ার জন্য। চতুর রাখাল এক বাটি চুনজল দই বলে রাক্ষসীকে খেতে দেয়। চুনজল খেয়ে রাক্ষসীর গলা জ্বলে যায়। তখন রাক্ষসীকে বেধড়ক লাঠিপেটা শুরু করে ওই রাখাল। প্রাণ বাচাতে রাক্ষসী মন্দিরের একটি পাথর সরিয়ে কংসাবতী নদী পেরিয়ে পালিয়ে যায় গ্রাম ছেড়ে। সেই থেকে মন্দিরটি বিগ্রহ শূন্য।

যাতায়াত

লালগড় থেকে ডাইনটিকরি গ্রামের দূরত্ব ৬ কিমি। লালগড় থেকে সাইকেল রিকশা ভাড়া করে যাওয়া যায়। আগ্রহী ভ্রমণার্থীরা সংখ্যায় বেশি হলে ট্রেকার নিয়েও যেতে পারেন।
ঝাড়গ্রাম থেকে ডাইনটিকরির দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। ঝাড়গ্রাম থেকে ভাড়ার গাড়ি নেবে ৫০০/৬০০ টাকা।

ডাইনটিকরি দেখতে হলে, লালগড়ে পৌছে স্থানীয় গবেষক ও গাইড পঙ্কজকুমার মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ (৯৪৩৪৯৯২৪১৭) করতে পারেন। পঙ্কজবাবু বিনা পারিশ্রমিকে গাইডের কাজ করেন।